সেদিন ও সে [পর্ব-০১]  

মাঝরাতে যখন টের পেলাম সৌজন্য পরকীয়ায় জড়িত, ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সেদিন সন্ধ্যায়-ই আমি জানতে পারি আমি প্রেগন্যান্ট। সৌজন্য বাসায় এসেই নিজের ক্লান্তি দেখিয়ে ঘুমিয়ে গেছে বিধায় তাকে আর কিছুই বলা নয় নি এই ব্যাপারে। মাঝরাতে যখন ঘুম ভাঙ্গল, সময় দেখার জন্য ফোন তুলতেই সৌজন্যের ফোনের জ্বলজ্বলে নোটিফিকেশন দেখে আমার চোখ থমকায়, নিজের আগ্রহ দমাতে না পেরে ওর ফোনের লক খুলতেই মেসেজ গুলো চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে উঠল। আমি থমকে গেছি মনে হল, আমার দুনিয়া দুলছে সাথে। তার মধ্যে কয়েকটা ছবি দেখে যেন পেট মুচড়ে উঠছিল।

কোনো মতে বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে চলে আসতেই মুখ ভরে বমি হল, সাথে ঘৃণা হল, এই জঘন্যতম লোকটার অংশ নিজের শরীরে ধারণ করছি এইভেবে। লম্বা একটা শ্বাস ফেলে ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে আবারও বিছানায় বসে কাঁপা হাতে সৌজন্যের ফোনটা তুললাম।

নিজেকে শক্ত রেখে মোবাইলের ভেতরে আনাচে-কানাচেতে যত যা ছিল সব ঘেটে বুঝলাম, মেয়েটা সৌজন্যের অফিসের কলিগ। তা ছাড়াও মেয়েটা আর সৌজন্যে একই ভার্সিটির সিনিয়র জুনিয়র ছিল। ঢোক গিলে ভাবলাম এখন প্রায় রাতের শেষ ভাগ ভোর সাড়ে চারটা, সকালে উঠেই এসব নিয়ে আগে মায়ের সাথে কথা বলবো, তাই ধীরে ওর ফোনটা পাশে রেখে বিছানায় শরীর এলিয়ে দেই। কিন্তু আমার শরীর এখনো ঘৃণায় গুলিয়ে উঠছে, আমি শুতেই সৌজন্য নড়েচড়ে আমায় হুট করেই জড়িয়ে ধরে আমার গলায় মুখ ডোবায়। আমি নিজেকে থামাতে না পেরে মুচড়োমুচড়ি করতেই সৌজন্য পিটপিটিয়ে চোখ মেলে চাইল। তারপর ঘুম জড়ানো গলায় আমায় বলল——–

সমস্যা কি পেখম? ঘুমাচ্ছি দেখছ না? এর নড়ছো কেন?”
আমি চোয়াল শক্ত করে বললাম—–
“ছাড়ুন আমায়, আমার দমবন্ধ লাগছে!”
সৌজন্য অবাক চোখে তাকায়। তারপর জিজ্ঞেস করল,
“তোমার কি শরীর খারাপ?”
এক কথায় জবাব করলাম, “না!”
“তাহলে?”
আমি সৌজন্যের বুকে হাত ঠেকিয়ে তাকে দূরে ঠেলে সরিয়ে দিতে দিতে বললাম,
“আগে আমায় ছাড়ুন, আপনার ছোঁয়া পর্যন্ত আমার বি°ষের মত লাগছে, দম বন্ধ হয়ে ম°রে যাবো আমি, প্লিজ আমায় ছাড়ুন!”
কথা বলতে বলতে আমি কান্না করে দিলাম। ঘুম ভেঙ্গে এমন কথা শুনে সৌজন্য চমকে চোয়াল শক্ত করল; যেই মেয়ে সৌজন্যের একটা স্পর্শ পাওয়ার জন্য তীব্র আকাঙ্খা নিয়ে বসে সৌজন্যকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করত। আর আজকে সে মেয়ে বলছে সৌজন্যের ছোঁয়া মেয়েটার কাছে বি°ষ?
নিজেকে সামলাতে পারল না সৌজন্য, ধুপ করে উঠে বসে পেখমের হাত চেপে এক টানে বিছানায় উঠে বসালো তারপর হতবাক ও রাগত্ব গলায় শুধায়—–
“কি বললে তুমি?”
পেখম স্থীর চোখে সৌজন্যের মুখে তাকাল। সৌজন্যের ঠোঁটের কোনায় একটা কালো তিল আছে, যেটা সব সময় পেখমকে টানে তবে আজকে যেন সেই তিলের প্রতিও ঘৃনা আসছে ভেতর থেকে। সৌজন্য উত্তর পায়নি তবে পেখমের চোখে অনেক গুলো ঘৃণা দেখতে পেল। অনেকটা অবাক হয় সৌজন্য, যেন সে জানেই না পেখম কেন এমন করছে।
তাই নিজেকে শান্ত করে এগিয়ে এসে পেখমের মুখটা নিজের হাতের আঁজলায় নিয়ে চু°মু খাবে ভাবতেই তার আগে পেখম জেদ দেখিয়ে মুখ ওর থেকে সড়িয়ে নিল, তাতে একটু হতাশ হল সৌজন্য। পেখম আর সৌজন্যের বিয়েটা পারিবারিক ভাবে।
পেখমও খুব একটা বড় নয়, পেখমের মা আর সৌজন্যের খালা বান্ধবী তাই সেভাবেই পেখমের ইন্টার দেবার সাথে সাথে সৌজন্যের সাথে বিয়ে হয়, তার কারণও আছে বটে — পেখমের বাবা নেই, আর সৌজন্যের খালার কোনো বাচ্চা নেই, খালা সৌজন্যকে নিজের সন্তানের মত আদর করে, আর সৌজন্যের মা বলতেও ওর খালা আর জন্মদায়িনী নারী এই দুইজনকেই বোঝে। সৌজন্যের খালার অনেক ইচ্ছে পেখমকে বাড়ির বউ বানাবে; তাই খালার ইচ্ছে পূরণ করতে পেখমকে বিয়ে করেছিল। সৌজন্যের খালা পেখমকে আগে থেকেই পছন্দ করত, তাই খালা যখন পেখমের বিয়ের প্রস্তাব দিল, পেখমের মা পেখমকে মেডিক্যাল ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়েই সৌজন্যের সাথে পরিবারিক ভাবে বিয়ে দিয়ে দেন, প্রথম প্রথম পেখমকে সৌজন্যের একদম সহ্য হত না, মেয়েটা সৌজন্যের থেকে গুনে গুনে সাত থেকে আট বছরের ছোট। কিন্তু পেখমের দিকটা ছিল একদম স্বচ্ছ, সে বিয়ের পর থেকেই সৌজন্য ছাড়া কিছু বুঝত না, দিন রাত পতিব্রত-ই যেন পেখমের মূল লক্ষ্য হয়ে উঠল জীবনের, এর জন্য নিজের পড়ালেখাও ছেড়েছে সে। সৌজন্য বেশ করেবার পড়ালেখার কথা তুলেছিল তবে পেখম তেমন একটা গায়ে মাখে নি।
বিয়ের একবছর পাঁচ মাসের মাথায় কি এমন হল যে পেখম রাতের বেলায় হুট করে এমন অদ্ভুত আচারণ করছে তা বুঝতে পারল না সৌজন্য। তাই নিজে জেদ করে পেখমের মুখটা নিজের দিকে ফিরিয়ে আবারো আদুরে ভঙ্গিতে শুধায়—–
“কি হয়েছে সোনা? বলো আমায়? খারাপ লাগছে? মায়ের বাসায় যাবে?”
ধীর চোখে সৌজন্যের মুখটা দেখে পেখম তারপর হাত দিয়ে গালের হাতটা ছাড়িয়ে শক্ত গলায় বলল,
“যাব, কিন্তু আপনাদের বাসায় নয়, আমার মায়ের বাসায়!”
কপাল কুঁচকায় সৌজন্য। নিজের রাগ যেন আজকে খুব ধৈর্য ধরছে তাই নিজেও শান্ত রয়েছে সৌজন্য। কিন্তু এবার যেন বাড়াবাড়ি হয়ে গেল তাই নিজের রাগের পারদ দমন করতে না পেরে একহাতে চোয়াল চেপে ধরল পেখমের, বুড়ো আঙুলটা একপাশের গালে বাকি চারটা অন্য গালে, ব্যাথায় যেন চোয়াল ভেঙে আসবে পেখমের তবে সেদিকে খেয়াল নেই সৌজন্যের নিজের রাগকে প্রশ্রয় দিয় চিড়বিড়ে রাগ নিয়ে রাগান্বিত গলায় বলল,
“সমস্যা কি তোর? কত কি জিজ্ঞেস করছি, বলছিস না! এতো রক্ত গরম হলো কেমনে তোর? শরীরে ত্যাজ উঠছে? বললেই তো পাড়িস আমার সাথে থাকতে ইচ্ছে করছে!”
কথাটা বলেই দ্রুত নিজের শরীরের টি শার্ট টা টেনে খুলে ফেলল সৌজন্য। এই কথা গুলো যেন আরো বিশ্রী ঠেকল পেখমের, এতোটা নিকৃষ্ট এই লোক। সাথে পেখমের চোখ আটকালো সৌজন্যের বক্ষে, হতবাক মুখে সেখানে আঙুল ছোঁয়াতেই সৌজন্যও সেখানে তাকাল, একটা সদ্য জন্মানো খামচির দাগ! সৌজন্যও একটু বিচলিত হল; এদিকে চোখের পানি টলমল করে উঠল পেখমের। পেখম নিজের হিতাহিতজ্ঞান শূন্য হয়ে রাগে ধাক্কা মেরে বসল সৌজন্যকে তারপর চেঁচিয়ে বলল,
“এই দাগ কে করেছে সৌজন্য? আমার সাথে তো আপনি অনেকদিন থাকেন না, তাহলে এই খামচি? এই খামচি কে দিয়েছে? কোথা থেকে এলো এটা?”
থতমত খায় সৌজন্য। চুপসে এলো সৌজন্য তারপর সাফাই গাওয়ার গলায় পেখমের দিকে এগোতে এগোতে বলল,
“লেট মি এক্সপ্লেইন পাখি!”
“চুপ; একদম চুপ। পরকীয়া করছেন আপনি সাথে… .!”
আর বলতে পারল না পেখম, তার আগেই উচ্চস্বরে সৌজন্যে বলল,
“পেখম!”
সাথে হাত উঠে গেল পেখমের গালে। পেখম অবাক ও নিস্তব্ধ, অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে গালে হাত রাখল। তারপর অবাক গলায় শুধায়,
“আপনি আমায় মারলেন সৌজন্য?”
“হ্যাঁ, মেরেছি। আদরে মাথায় তুলেছি। সেখান থেকে নামিয়ে আছাড় মারতেও আমায় সময় লাগবে না, সেটাই প্রমাণ দিলাম!”
নিজেকে সামলে শ্বাস ফেলল পেখম তারপর বিছানা থেকে উঠে গায়ের শাড়ি ঠিক করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পিঠসমান লালচে চুল গুলো হাত খোঁপা করে দৃঢ় গলায় বলল,
“এসব প্রমাণ দিলেই আমি ভুলে যাব না আপনি পরকীয়ায় জড়িত!”
এতটুকু বলে থামল, তারপর বিছানায় বসা সৌজন্যর দিকে তাকাল। একটা রুদ্ধ শ্বাস ফেলে ফের বলল,
“আমি আমার বাবার বাড়ি যাচ্ছি। ফিরব না আর। আনিয়া আমার থেকে সুন্দর, ম্যাচিউর, শিক্ষিত, জব করে। তাকে বিয়ে করে নিয়েন, ভালো থাকবেন। আর ডিভোর্স লেটার খুব শিগগিরই পাঠিয়ে দেব!”
সৌজন্যের আর বুঝতে বাকি নেই পেখম সব দেখে ফেলেছে। এবার যেন আর নিজেকে আটকাতে পারল না, শরীরে শয়তান ভর করল কিনা কে জানে হুট করে বিছানা থেকে নেমে পেখমের ঘাড় চেপে ধরল তারপর ফুশতে ফুশতে বলল,
“কই যাবি তুই? কোথাও যেতে পারবি না। তুই এখানেই থাকবি।”
পেখমের যেন জান বেড়িয়ে আসছে। চোখ মুখ লাল রক্তাভ হয়ে এসেছে শুধু বিরবির করে বেশ কয়েকবার বলল,
“ছাড়ুন, আমি ব্যাথা পাচ্ছি। সৌজন্য ছাড়ুন আমায়!”
কথা শুনল না সৌজন্য। শুধু বেশ কয়েকবার জেদ দেখিয়ে বলল,
“তুই এখান থেকে কোথাও যেতে পারবি না পেখম।”
এর মাঝে সৌজন্যকে এক হাতে ছাড়াতে চাইল পেখম। তবে পুরুষালী শক্তপোক্ত হাতের চাপ যেন সহ্য করতে পারল না নরম শরীরটা। ওকে টেনে নিয়ে বিছানায় ফেলে পেখমের শরীরের শাড়িটা টেনে খু°লল সাথে জোর করে পেখমের সাথে ঘ°নিষ্ঠ হয় সৌজন্য। আর প্রতিবারের তুলনায় এবার যেন পেখম কুলিয়ে উঠতে পারল না৷ পেখম যখন একদম নেতিয়ে আসে তখন সৌজন্য পেখমকে ছেড়ে দেয় তবে পেখমের শরীরে এক ফোঁটা শব্দ করার বা নড়েচড়ে ওঠার শক্তি পর্যন্ত নেই।
সৌজন্য বিনা প্রতিক্রিয়ায় ওয়াশরুমে চলে যায়। অনেকটা সময় ব্যয় করে শাওয়ার নিয়ে যখন সৌজন্য ওয়াশরুম থেকে বের হয় তখন সকাল সাড়ে ছয়টা। ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে সর্বপ্রথম চোখ যায় বিছানায়। পেখম একপাশে পড়ে আছে। আর বিছানার কাঠ বেয়ে র°ক্তের ঢ°লে সাদা টাইলসে যেন স্রো°তের ফো°য়ারা যাচ্ছে। ভয়ে দম আটকে এলো সৌজন্যের। ভীত পায়ে এগিয়ে এসে পেখমকে ঘুরায় নিজের দিকে। পেখমের উ°ন্মুক্ত শরীরে শুধু বিছানার অবহেলিত চাদরটা আধা-পেঁচিয়ে আছে। সাথে তার মুখটা একদম নীল হয়ে আছে। ঢোক গিলে সৌজন্য, পেখমের গালে কয়েকবার আলতে চাপর দিয়ে ডাকল,
“পেখম? এই পলক? এই মেয়ে, তাকা আমার দিকে, কি হয়েছে তোর? কথা বল।”
জবাব এলো না! ভয়ে হাত পা কেঁপে উঠল সৌজন্যের। গলা শুকিয়ে আসছে সাথে। এলোমেলো মস্তিষ্ক নিয়ে পেখমের হাত ধরে পালস পরীক্ষা করে সৌজন্য। তারপর আবারো গালে হাত রেখে ভীত ও নরম গলায় বলল,
“এই পলক, তাকাও আমার দিকে। কি হয়েছে তোমার? কথা বলো? চোখ খুলে তাকাও, কি হয়েছে বলো আমায়…
চলবে,…

  • প্রানেশা আহসান শীতল
  • Related Posts

    প্রণয় প্রহেলিকা [পর্ব- ৩১]

    সকলের একটাই কথা,  “শেষমেশ বাচ্চার কাছেই হৃদয় হারালি?” অনল তখন গর্বের সাথে বললো,  “তাহলে বুঝে দেখ আমার বউটি কতো গুণী, আমার হৃদয় চুরি করা যার তার কাজ নয়।” ধারা তো…

    বাহারি স্বপ্ন [পর্ব-৩০]

    দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ ছাদে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই আশিনকে অবাক করে দিয়ে উৎস হঠাৎ করেই বলে ওঠে,“ ক্ষুধা পেয়েছে খুব। খাবার থাকলে কিছু খেতে দাও।ʼ আশিন উৎসর দিকে গাঢ় দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।…

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    You Missed

    প্রণয় প্রহেলিকা [পর্ব- ৩১]

    প্রণয় প্রহেলিকা [পর্ব- ৩১]

    সেদিন ও সে [পর্ব-০১]  

    সেদিন ও সে [পর্ব-০১]  

    বাহারি স্বপ্ন [পর্ব-৩০]

    বাহারি স্বপ্ন [পর্ব-৩০]

    প্রণয় প্রহেলিকা [পর্ব-৩০]

    প্রণয় প্রহেলিকা [পর্ব-৩০]

    তৃষিত তরঙ্গ [পর্ব-০১]

    তৃষিত তরঙ্গ [পর্ব-০১]

    বেশ্যার লাশ | সাধুর নগরে বেশ্যা মরেছে

    বেশ্যার লাশ | সাধুর নগরে বেশ্যা মরেছে