ন্যায়বিচার ও ইসলামী ভ্রাতৃত্ব

হযরত উমর (রা.) এর শাসন আমল। একদিন দুজন লোক এক বালককে টেনে নিয়ে আসল তাঁর দরবারে । উমর তাদের কাছে জানতে চাইলেন, কেন তারা বালকটিকে এভাবে নিয়ে আসা হল?’ তারা বলল, ‘এ বালক তাদের পিতাকে হত্যা করেছে।’ উমর বালকটিকে বললেন, ‘তুমি কি সত্যিই তাদের পিতাকে হত্যা করেছ?’ বালকটি বলল,’ হ্যা! আমি হত্যা করেছি তবে তা ছিল দূর্ঘটনাবশত, আমার উট তাদের বাগানে ঢুকে পড়েছিল তা দেখে তাদের পিতা একটি পাথর ছুড়ে মারে, যা উটের চোখে লাগে এবং চোখ থেকে রক্ত বের হতে থাকে। যা দেখে আমি রাগান্বিত হয়ে একটি পাথর ছুঁড়ে মারি, যে পাথরটি তার মাথায় লাগলে তিনি মারা যান।’

 উমর মৃত ব্যক্তির দুই ছেলেকে বলেলন, ‘তোমরা কি এ বালককে ক্ষমা করতে পার?’ তারা বলল, ‘না, আমরা তার মৃত্যুদণ্ড চাই।’ তাদের এ রায় শুনে উমর বালকটির কাছে জানতে চাইলেন, ‘তোমার কি কোন শেষ ইচ্ছা আছে?’ বালকটি বলল, ‘আমার বাবা মারা যাওয়ার সময় আমার ছোট ভাইয়ের জন্য কিছু সম্পদ রেখে যান, যা আমি এক জায়গায় লুকিয়ে রেখেছি। আমি তিন দিন সময় চাই, সেই সম্পদ আমার ভাইকে বুঝিয়ে দিয়ে আসার জন্য।’ উমর বললেন, ‘আমি তোমাকে বিশ্বাস করতে পারি যদি তুমি একজন জামিন জোগাড় করতে পার যে নিশ্চয়তা দেবে যে তুমি ফিরে আসবে।’ বালকটি দরবারের চারদিকে তাকাল এত মানুষের মধ্যে কেউই তার জামিন হল না। সবাই নিচের দিকে তাকিয়ে রইল।

হঠাৎ দরবারের পেছন থেকে একটি হাত উঠল। কার হাত ছিল এটি? প্রখ্যাত সাহাবি আবু যর গিফারী (রা.), তিনি বললেন, তিনি তার জামিন হবে। চিন্তা করুন জামিন মানে হল, যদি বালকটি ফিরে না আসে তবে তার শিরচ্ছেদ করা হবে। পরে বালকটিকে যেতে দেওয়া হল। এক দিন গেল, দ্বিতীয় দিন গেল, তৃতীয় দিনে দুই ভাই আবু যরের সম্মুখে উপস্থিত হলেন। আবু যর বললেন, তিনি মাগরিব পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। মাগরিবের কিছুক্ষণ আগে আবু যর দরবারের দিকে রওনা হলেন। মদিনার লোকজন তাঁর পেছন পেছন যেতে লাগল। সবাই দেখতে চায় কি ঘটে। আবু যর একটি বালকের ভুলের কারণে আজ জীবন দিচ্ছেন। হঠাত্ আজানের কিছুক্ষণ আগে বালকটি দৌঁড়ে এলো। লোকেরা সবাই অবাক হল।

উমর বললেন, হে বালক তুমি কেন ফিরে এসেছ? আমিতো তোমার পিছনে কোন লোক পাঠাইনি। কোন জিনিসটা তোমাকে ফিরিয়ে আনল? বালকটি বলল, ‘আমি চাই না যে, কেউ বলুক একজন মুসলিম কথা দিয়েছিন কিন্তু সে কথা রাখেনি তাই আমি ফিরে এসেছি। উমর আবু যরকে বললেন, হে আবু যর, তুমি কেন এ বালকের জামিন হলে? আবু যর বললেন, আমি দেখলাম একজন মুসলমানের সাহায্য প্রয়োজন, আমি চাই না যে, কেউ বলুক একজন মুসলমানের সাহায্য প্রয়োজন ছিল কিন্তু কোন মুসলমান তাকে সাহায্য করেনি। এ কথা শুনে দুই ভাই বলল, ‘আমরাও চাই না যে কেউ বলুক একজন মুসলমান ক্ষমা চেয়েছিল কিন্তু অন্য মুসলমান তাকে ক্ষমা করেনি। তারপর বালকটিকে ক্ষমা করা হল। বর্তমান সমাজে কি পাওয়া যাবে মুসলিম ভ্রাতৃত্বের এ অপরূপ দৃষ্টান্ত? যারা ইসলামকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে তারা যেন দেখে নেয় ইসলামের সৌন্দর্য!

লেখা: আজিমুল হক

  • Related Posts

    উলঙ্গ_মন

    আচ্ছা বাবা, তোমরা যেইটা দিয়ে পিশাব করো, ঐটা মুখে নিলে কী হয়? নিজের ৬ বছর বয়সের বাচ্চা মেয়েটার মুখে এই প্রশ্নটা শুনে “আরিফ পুরো থতমত খেয়ে গেল। রিতু এতক্ষন ধরে…

    রহস্যময় ৫০ “লাখ টাকা

    মোবাইলে একটা SMS এলো। তাকিয়ে দেখি.. “সরকারের তরফ থেকে আমার এ্যাকাউন্টে ৫০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে” আমার মন খুশিতে ভরে গেল। ঘর থেকে বের হলাম আর চিৎকার করে বাড়ির সবাইকে…

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    You Missed

    সেদিন ও সে [পর্ব-১০]

    সেদিন ও সে [পর্ব-১০]

    প্রজাপতি আমরা দুজন [পর্ব-০৩]

    প্রজাপতি আমরা দুজন [পর্ব-০৩]

    মেঘের দেশে প্রেমের বাড়ি [পর্ব-০৩]

    মেঘের দেশে প্রেমের বাড়ি [পর্ব-০৩]

    সেদিন ও সে [পর্ব-৮ & ৯]

    সেদিন ও সে [পর্ব-৮ & ৯]

    নবোঢ়া: আগুনফুলের আত্মনিবেদন [পর্ব-৫২]

    নবোঢ়া: আগুনফুলের আত্মনিবেদন [পর্ব-৫২]

    নবোঢ়া: আগুনফুলের আত্মনিবেদন [পর্ব-৫১]

    নবোঢ়া: আগুনফুলের আত্মনিবেদন [পর্ব-৫১]