ঘুটঘুটে অন্ধকার কে’টে সূচনা হয় নতুন দিনের।চারিপাশে হিমশীতল আবহাওয়া বিরাজমান।কুয়াশার আবরণে উঁকি দিচ্ছে সূর্যের আলোকরশ্মি।চোখ যত দূর যায় তাতে দেখা যাচ্ছে গুটি কয়েক লোকজন আগুন পোহাতে ব্যস্ত,এই সকাল সকাল একজন পাগল পুরুষের সাথে হাঁটতে বের হওয়ার বিষয়টি অন্য রকম।
সকাল সকাল রুমে এসে তড়িগড়ি করে চৈতি কে তুলে গায়ে একটি চাদর জড়িয়ে বেরিয়ে পড়ে দুজন, প্রথমে একটু রাগ হয় হিমেলের উপর। চৈতির বিউটি স্লিপ ভেঙে দিয়েছে সে কিন্তু তা বেশিক্ষণ বজায় থাকে না,এত সুন্দর একটি সকাল উপহার দিয়েছে তাকে সত্যি বুক ভরে শ্বাস নেওয়ার মত পরিবেশ।
‘ থ্যাংকিউ।’
হঠাৎ থ্যাংকিউ এর মানে খুঁজে পায়না হিমেল, জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় চৈতির দিকে।
‘ এত সুন্দর একটি সকাল উপহার দেওয়ার জন্য।’
হিমেল মুচকি হেসে মাথা চুলকে বলে।
‘এমন যদি বলিস তাহলে রোজ রোজ এর থেকেও ব্যাটার সকাল উপহার দেব কী বলিস?’
এটা বলে চোখ মা’রে হিমেল,চৈতি হিমেল এর দুষ্টুমি বুঝতে পারে।সে ঠিক কী বুঝাতে চেয়েছে সবই বুঝতে পারছে, মনে মনে রাজ্যের সব গা’লি ওর দিকে ছু’ড়ে ফেলছে।
সকাল থেকে বাড়ির বাইরে রান্না চলছে, আজ শুক্রবার অনেকেই দাওয়াত খাওয়ানো হবে কিন্তু তার আগে হিমেলের বাবা আশিক সিদ্দিক এর কবর জিয়ারত করতে যাবে সবাই।আশিক এই গ্রামেরই ছেলে ছিল, রুম্পা আর আশিকের বিয়ে এখানেই হয়েছে কিন্তু শহরে যাওয়ার পর ক্যা’ন্সা’রে আ’ক্রা’ন্ত হয়ে ই’ন্তেকাল করেন উনি।
বাড়ির পিছনে নারকেল গাছের বাগান,নিশা ফোন নিয়ে ওদিকে চলে যায়।ফোন অন করতেই দেখে ইশান কাল থেকে অনেক গুলো কল করেছে কিন্তু তার ফোনে চার্জ ছিল না তাই কথা বলতে পারেনি। তাড়াতাড়ি ইশান এর নাম্বারে কল করে নিশা।
ফোনের শব্দে ঘুম ঘুম চোখে তড়িগড়ি করে উঠে পড়ে ইশান,ফোন হাতে নিয়ে দেখে নিশার কল।
‘ হ্যা বলুন।’
‘ সরি সরি সত্যি আমি ছিলাম না,কাল ফোনে চার্জ ছিল না একদমই খেয়াল করিনি। প্লীজ প্লীজ রাগ করবেন না।’
ওদিকে প
ইশান ঠোঁট টিপে হাসছে না অজানাই রয়ে গেল নিশার।
‘ কী হলো কিছু বলছেন না যে?’
ইশান সোজা হয়ে বিছানায় শুয়ে বলে।
‘ দেখছিলাম আমার প্রেমিকার হৃদয় কথাটা ব্যাকুল হয়ে উঠেছে।’
‘ তার মানে আপনার রাগ হয়নি?’
‘ উঁহু রাগ না অভিমান হয়েছিল, কিন্তু এখন আর নেই। এখন বলো কেমন আছো?’
‘ ভালো। আপনার কেমন আছেন?’
‘ ভালো আছি, এরপর বলো?’
‘ একটা কথা বলি?’
‘ হুম বলো।’
‘ আমি আমার প্রেমিক পুরুষকে মিস করছি।’
‘ ইশ্, এত মিস করলে যে প্রবলেম হবে।’
‘ হোক প্রবলেম। মিস মিস মিস মিস মিস করছি।’
‘ তাহলে চলে আসি?’
‘ আসুন চলে,মানা করেছে কেন?’
‘ এই যে ম্যাডাম অফিস যেতে হবে তো।’
‘ আচ্ছা ঠিক আছে যান, নিজের খেয়াল রাখবেন খাওয়া দাওয়া করে নিন। আল্লাহ হাফেজ।’
‘ আল্লাহ হাফেজ।’
______________
‘ একটা কই?’
কিছুক্ষণ আগেই রুমে আসে হিমেল তার মধ্যে হিমানির সাথে ধাক্কা লেগে যায় ওর।
‘ উপ্স সরি সরি।’
‘ আরে হিমেল ভাইজান সুরি কন ক্যান?’
হিমানির কথা শুনে হিমেল এর মুখ কিঞ্চিৎ ফাঁক হয়ে যায়।
‘ ওহ্।’
হিমেল রুমে যেতে চাইবে তার মধ্যে আবারও হিমানি ওকে দাঁড়িয়ে একটা কথা জিজ্ঞেস করবে বলে।
‘ হ্যা বলো।’
‘ ভাইজান আপনে কিন্তু সেই সুন্দর,ওই বলে না বালিউড ছবির নায়ক নায়ক।’
‘ ও তাই কিন্তু আমার মনে হয় ওইটা বালিউড না বলিউড তারকা।’
‘ হো হো ওইডাই, একদম ওই রকম।’
‘ থ্যাংকিউ আগে কেউ বলে নি ওভাবে।’
‘ হিমা কই রে তুই? এদিকে আয়।’
আফিদা বেগম এর ডাকে হিমানি দৌড়ে চলে যায়, ওদিকে হিমেল হাসতে হাসতে শেষ কিন্তু তার হাসি বেশিক্ষণ থাকে না পিছনে তাকিয়ে দেখে বুকে হাত গুজে চোখ মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে চৈতি।
‘ চৈতি তুমি?’
‘ বলিউডের নায়ক।’
কথাটা বলে মুখ বাঁকিয়ে চলে গেল সে ,বো’কা বনে গেলো হিমেল।
রান্না শেষ হতে হতে দুপুর হয়ে যায়, আফতাব রহমান আনোয়ার রহমান হিমেল সিদ্দিক ও সিফাত রহমান সবাই জুম্মার নামাজের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় মসজিদে।
_________
‘ মাআআআআআ খিদে পেয়েছে ভীষণ খেতে দাও।’
প্রচুর মাথা ব্যথা করছে আরুহীর তাই আজ স্কুলে যায়নি সে,আর মনটাও ভালো না ভীষণ বিরক্ত লাগছে সব কিছু। তবে কী এসবের কারণ সিফাত? হয়ত,আসলেই কাল থেকে ভীষণ ভাবে মনে পড়ছে লোকটি কে। কোনো দিনই তো ভালো ভাবে কথা বলি না তবুও পাগলের ন্যায় ভালোবাসে।
রোশনা বেগম খাবার নিয়ে টেবিলের উপর রাখে,আরুহী খেতে লাগে।রোশনা বেগম মুচকি হেসে বলে।
‘ তা আমার মেয়ে কী এবারে বিয়ে করতে রাজী আছে?’
বিয়ের কথা বলতেই আরুহী থেমে যায়,হাতে রুটির টু’করো প্লেটে রেখে দেয়। বিয়ের কথা ভাবা মাত্র কেমন জানি একটু ভয় হয় তার কিন্তু যাই হোক এবার আর সিফাত কে ফিরে দেওয়া যাবে না,যদি সে সব কিছু জেনে বিয়ে করতে রাজি থাকে তাহলে ঠিক আছে ওরও কোনো প্রবলেম নেই।
ধানমন্ডির জমিতে ফ্লাট তৈরি করার কাজ শুরু হয়ে গেছে এই সব কিছুর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তিথি কে কিন্তু ওদিকে তিথা কী ভাবছে তা কেউ জানে না।
সন্ধ্যা বেলায় সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছে,সালমা আফিদা নানা খাবার তৈরি করে বাইরে নিয়ে এসেছে। বারান্দায় মাদুর পেতে সবাই বসে আছে, গল্প হচ্ছে আনোয়ারা রহমান ওনার স্বামীর কথা বলছেন।
‘ জানিস তোরা? তোদের দাদু এক দম অন্য রকম আছিল। আমারে পাগলের মত প্রেম করত।’
চৈতি হেসে বলে।
‘ ওয়ো দাদী কী বলছ? লজ্জা পেলাম।’
‘ ধুর মাইয়া কী আর লজ্জা পাইবি,তখন কার যুগ আর এমন ছিল না রে।আমাগো সপ্তাহে একদিন কথা হইত।’
নিশা হুট করে জিগ্যেস করে।
‘ একদিন কেন?’
‘ তখন তো আর সবাই এসব ভালা পাইত না তাই, আমাগো বিয়েও মেলা কান্ড কইরাই হইছে।আর তগো দাদু হেব্বি প্রেমিক ছিল কিন্তু।’
‘ আম্মা এসব কী কইতাছো?’
আফতাব রহমান নিজের মা বাবার কাহিনী শুনে লজ্জা পেয়ে বলেন।আনোয়রা রহমান ছেলের কথায় বলে।
‘ তোরা শুইনা কী করবি? যা গিয়া ঘুমা।’
আফতাব রহমান আসিফা রহমান কে নিয়ে ঘরে চলে যায়, শান্তা রহমান আর আনোয়ার রহমান কিছুক্ষণ আগেই ঘরে চলে গেলেন।
‘ মাঝে মাঝে আল্লাহর পবিত্র মিলেন পর তগো দাদু আমার অনেক সেবা করত,যাতে কষ্ট না লাগে।’
মিলনের কথা শুনে একটু লজ্জা কাজ করছে চৈতির ভেতরে,নিশা বসা থেকে উঠে চলে গেল।সিফাতও বাহানা দিয়ে উঠে গেলো। সালমা আনোয়ারা রহমান কে নিয়ে ভেতরে গেলেন,চৈতিও রুমে যেতে চাইল কিন্তু হিমেল যেতে দেয়নি।ওকে নিয়ে নারকেল বাগানে চলে যায়, অন্ধকার জায়গায় মাঝে মাঝে চাঁদের আলো এসে পড়ছে। হিমেল চৈতি কে নিজের কাছে ধরে রেখছে,একে অপরের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে ওরা। হিমেল বার বার জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভেজাচ্ছে , ওদিকে তার সামনে দাঁড়ানো মেয়েটির ভেতরে মে তোলপাড় শুরু হয়েছে তা কী টের পাচ্ছে না সে?
‘ চড়ুই পাখি।’
‘ হুম।’
‘ তোকে একটু ছুঁই?’
হিমেলের এই জড়ানো কন্ঠে কথা গুলো পুরো অঙ্গে শিহরণ তুলছে চৈতির,মাটির দিকে তাকিয়ে আছে সে।
হিমেল আবারও ধীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করে।চৈতি কিছু বলার আগেই হিমেল ঝাপটে জড়িয়ে নেয় তার ছোট্ট দেহটাকে।একে একে নিজের শুকনো ঠোঁট দুটো বার বার ছুঁইয়ে দিচ্ছে তার ঘাড়ে, কেঁ’পে উঠছে সে।এক অদ্ভুত অনুভূতির সাথে পরিচিত হলো চৈতি যা সবসময় মনে থাকবে তার। নিজের ছোট হাত দুটো দিয়ে জড়িয়ে নিল হিমেল নামে প্রেমিক পুরুষ কে।
‘ ভালোবাসি খুব ভালোবাসি তোকে।’
‘ পাগল আপনি।’
‘ হুম তোর জন্য উ’ন্মাদ।’
‘ আমার উ’ন্মাদ প্রেমিক পুরুষ।’
‘ আমার একান্ত চড়ুই পাখি।’
চলবে…….