প্রিয় দশ জন মানুষ | ছোট গল্প

টিচার খুব আন্তরিকতার সাথেই পাশের মেয়েটাকে বললেন,

__জননী তোমার কি বিয়ে হয়েছে?
“মেয়েটা একটু লজ্জা পেয়ে বলল”
__হ্যাঁ স্যার। আমার একটা দুই বছরের ছেলে
আছে।
.
টিচার চট করে দাঁড়ালেন। খুব হাসি হাসি মুখ নিয়ে বললেন, “আমরা আজ আমাদেরই একজনের প্রিয় মানুষদের নাম জানবো। এই কথা বলেই মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললেন,
.
__মা আজকে তুমিই টিচার। এই নাও চক, ডাষ্টার।
যাও তোমার প্রিয় দশ জন মানুষের নাম লেখো। মেয়েটা বোর্ডে গিয়ে দশ জন মানুষের নাম লেখলো। টিচার বললেন,
.
এরা কারা? তাদের পরিচয় ডান পাশে লেখো। মেয়েটা এদের পরিচয় লেখলো।
.
সংসারের সবার নামের পাশে দুই একজন বন্ধু, প্রতিবেশীর নামও আছে। টিচার এবার বললেন,
.
–লিষ্ট থেকে পাঁচ জনকে মুছে দাও। মেয়েটা তার প্রতিবেশী, আর ক্লাশমেটদের নাম মুছে দিলো।
টিচার একটু মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, আরো তিন জনের নাম মুছো। মেয়েটা এবার একটু ভাবনায় পড়লো। ক্লাশের অন্য ষ্টুডেন্টরা এবার সিরিয়াসলি নিলো বিষয়টাকে। খুব মনযোগ
দিয়ে দেখছে মেয়েটার সাইকোলজি কিভাবে কাজ
করছে। মেয়েটার হাত কাঁপছে।
.
সে ধীরে ধীরে তার বেষ্ট ফ্রেন্ডের নাম মুছলো।
এবং বাবা আর মায়ের নামও মুছে দিলো। এখন মেয়েটা রিতিমত
কাঁদছে।
.
যে মজা দিয়ে ক্লাশটা শুরু হয়েছিলো, সেই মজা আর
নেই। ক্লাশের অন্যদের মাঝেও টানটান উত্তেজন।
লিষ্টে আর বাকী আছে দুইজন। মেয়েটার হাজবেন্ড আর
সন্তান। টিচার এবার বললেন, আরো একজনের নাম মুছো।
কিন্তু মেয়েটা ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। কারো নাম মুছতে সে
আর পারছেনা। টিচার বললেন
.
–মা গো, এইটা একটা খেলা।
সাইকোলজিক্যাল খেলা। জাষ্ট প্রিয় মানুষদের নাম মুছে দিতে
বলেছি, মেরে ফেলতে তো বলিনি!!!
.
মেয়েটা কাঁপা কাঁপা হাত নিয়ে ছেলের নামটা মুছে দিলো।
টিচার এবার মেয়েটার কাছে গেলেন, পকেট থেকে একটা
গিফ্ট বের করে বললেন– তোমার মনের উপর দিয়ে যে
ঝড়টা গেলো তার জন্য আমি দুঃখিত। আর এই গিফ্ট বক্সে
দশটা গিফ্ট আছে। তোমার সব প্রিয়জনদের জন্য।
.
এবার বলো, কেন তুমি অন্য নামগুলো মুছলে। মেয়েটা
বলল- প্রথমে বন্ধু আর প্রতিবেশীদের নাম মুছে দিলাম।
.
কারন তবু আমার কাছে বেষ্ট ফ্রেন্ড আর পরিবারের সবাই
রইলো। পরে যখন আরো তিন জনের নাম মুছতে
বললেন, তখন বেষ্ট ফ্রেন্ড আর বাবা মায়ের নাম মুছে
দিলাম। ভাবলাম, বাবা মা তো আর চিরদিন থাকবে না। আর বেষ্ট
ফ্রেন্ড না থাকলে কি হয়েছে?
.
আমার কাছে আমার পুত্র আর তার বাবাই বেষ্ট ফ্রেন্ড। কিন্তু
সবার শেষে যখন এই দুইজন থেকে একজনকে মুছতে
বললেন তখন আর সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না।
.
পরে ভেবে দেখলাম, ছেলেতো বড় হয়ে একদিন
আমাকে ছেড়ে চলে গেলেও যেতে পারে। কিন্তু
ছেলের বাবাতো কোন দিনও আমাকে ছেড়ে যাবে না।

কালেক্টেড
#Story_Box

  • Related Posts

    উলঙ্গ_মন

    আচ্ছা বাবা, তোমরা যেইটা দিয়ে পিশাব করো, ঐটা মুখে নিলে কী হয়? নিজের ৬ বছর বয়সের বাচ্চা মেয়েটার মুখে এই প্রশ্নটা শুনে “আরিফ পুরো থতমত খেয়ে গেল। রিতু এতক্ষন ধরে…

    রহস্যময় ৫০ “লাখ টাকা

    মোবাইলে একটা SMS এলো। তাকিয়ে দেখি.. “সরকারের তরফ থেকে আমার এ্যাকাউন্টে ৫০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে” আমার মন খুশিতে ভরে গেল। ঘর থেকে বের হলাম আর চিৎকার করে বাড়ির সবাইকে…

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    You Missed

    সেদিন ও সে [পর্ব-১০]

    সেদিন ও সে [পর্ব-১০]

    প্রজাপতি আমরা দুজন [পর্ব-০৩]

    প্রজাপতি আমরা দুজন [পর্ব-০৩]

    মেঘের দেশে প্রেমের বাড়ি [পর্ব-০৩]

    মেঘের দেশে প্রেমের বাড়ি [পর্ব-০৩]

    সেদিন ও সে [পর্ব-৮ & ৯]

    সেদিন ও সে [পর্ব-৮ & ৯]

    নবোঢ়া: আগুনফুলের আত্মনিবেদন [পর্ব-৫২]

    নবোঢ়া: আগুনফুলের আত্মনিবেদন [পর্ব-৫২]

    নবোঢ়া: আগুনফুলের আত্মনিবেদন [পর্ব-৫১]

    নবোঢ়া: আগুনফুলের আত্মনিবেদন [পর্ব-৫১]