ইচ্ছে ঘুড়ি

আমার নাহ অনেক ইচ্ছে করে জানো!
তোমায় নিয়ে কোনো এক পূর্ণিমা রাতে, বাসার ছাদে বসে তোমার ওই কাজল চোখ দুটোর দিকে তাকিয়ে থাকবো। যে চোখ দেখে প্রথম তোমার মায়ায় পরেছিলাম।

আচ্ছা তোমার কি সেই দিনটার কথা মনে আছে, যেদিন আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিলো। সেদিন ছিলো আকাশে কালো মেঘের ভেলা। বোঝা যাচ্ছিলো খানিক বাদেই বৃষ্টি নামবে। ঠিক সেই সময় মাঠের একপাশ দিয়ে হেটে আসছিলে তুমি। পরনে হলুদ শাড়ি, হাতে কাচের চুরি, মাথায় বকুল ফুলের বেনি, আর পায়ে নুপুরের ঝুমঝুম আওয়াজ। বিশ্বাস করো আমি না সেইদিন তোমার দিক থেকে চোখ শরাতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিলো চারপাশ যেনো নিস্তব্ধ হয়ে গেছে।

তারপর থেকে রোজ তোমায় দেখতে মাঠে যাওয়া। তোমার টোল পরা হাশি আর কাজল কালো চোখের সাথে মনে মনে কথা বলা। কত সুন্দরই না ছিলো সেই দিন গুলি।

অই দিনের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে তোমার। আমি রোজ তোমার দিকে তাকায় থাকতাম বলে কি বকাটাই না দিলে আমায়। সেইদিন বড্ড ভয় পেয়েছিলাম জানো, মনে হচ্ছিলো এই বোধহয় আর তোমার কাজল চোখ, টোল পরা হাশি আর দেখতে পারবো নাহ। তারপর তুমি যখন একটা হাশি দিয়ে বললে ”আরে ভয় পেয়ে গেলেন নাকি আপনি? আমি তো মজা করলাম। আর হ্যা কালকে আপনার অপেক্ষায় থাকবো।” তখন কি লজ্জাটাই না পেলাম আমি। সেদিন অবশ্য মুখ ফুটে কিছু বলা হয়নি তোমায়।

পরেরদিন বিকেলের খানিকক্ষণ আগে এক গুচ্ছ লাল ভালোবাসা কিনে মাঠে গেলাম। সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষাও করলাম। কিন্তু কেনো জানি তুমি আসলে নাহ। তারপর এক আকাশ পরিমান অভিমান নিয়ে বাসার দিকে ফিরলাম।

কিছুক্ষণ বাদেই দেখি তোমার বান্ধুবির কল, রিসিভ করলাম। তারপরেই যেনো আমার জীবনে নেমে এলো এক অন্ধকার সময়। তোমার বান্দুবি বললো তুমি আর নেই। চলে গেছো অনেক দূরে। যেখানে গেলে কেউ আর ফিরে আসে না। বিশ্বাস করো আমি না নিজের চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারিনি। চারপাশ যেনো নিস্তব্ধ হয়ে যাচ্ছিলো। আর বার বার মন বলছিলো এটা যদি একটা দূরসপ্ন হতো। আমি যদি আবার তোমার মুখখানা দেখতে পেতাম। তবে মন বললে কি আর হবে? সেইদিন বাস্তবতাকে মেনে নিতেই হয়েছিলো।

আমি না সেইদিন থেকে আজ অবদি বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সেই মাঠে তোমার জন্য অপেক্ষা করি। তবে আমি জানি যে তুমি আর আসবে না। তোমার কাজল চোখ আর দেখতে পারবো নাহ। তবুও কেনো জানি তোমার জন্য অপেক্ষা করতে ভালো লাগে।

আমার না আরেকটা ইচ্ছে আছে জানো, তোমার সাথে তো কখনো সরাসরি কথা হয়নি। তাই আমার অনেক ইচ্ছে করে তোমায় নিয়ে কোথাও বসে চিৎকার করে বলি আমি তোমায় ভালোবাসি। এই পৃথিবীতে তো আর আমার ইচ্ছা গুলো পূরণ করা সম্ভব না। তাই আমার ইচ্ছে গুলো ঘুড়ির মতই আকাশে উড়িয়ে দিলাম। তুমি না হয় আকাশ থেকেই আমার লেখাটি পড়ে নিও।

আরা

  • Related Posts

    আবছায়া

    আই. এ. পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেদিন ভর্তি হলাম সেদিন মনে ভারী ফূর্তি হল। বাস্ রে কত বড় বাড়ি। করিডরের এক প্রান্তে দাঁড়ালে অন্য প্রান্ত ধু-ধু করে। ঘরের পর ঘর,…

    বিকেলের দিকে

    এক-একটা দিন এমনিই কাটে। যেদিন সকাল থেকে মনে হয় আজ অনেক কিছু ঘটবে। সুন্দর কিছু। কিন্তু একঘেয়ে সেদিনও রাতে গড়িয়ে যায়। ঘটে না কিছুই। লাইট নিভিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল নীলা।…

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    You Missed

    প্রণয় প্রহেলিকা [পর্ব- ৩১]

    প্রণয় প্রহেলিকা [পর্ব- ৩১]

    সেদিন ও সে [পর্ব-০১]  

    সেদিন ও সে [পর্ব-০১]  

    বাহারি স্বপ্ন [পর্ব-৩০]

    বাহারি স্বপ্ন [পর্ব-৩০]

    প্রণয় প্রহেলিকা [পর্ব-৩০]

    প্রণয় প্রহেলিকা [পর্ব-৩০]

    তৃষিত তরঙ্গ [পর্ব-০১]

    তৃষিত তরঙ্গ [পর্ব-০১]

    বেশ্যার লাশ | সাধুর নগরে বেশ্যা মরেছে

    বেশ্যার লাশ | সাধুর নগরে বেশ্যা মরেছে