অন্য দুনিয়া

পলাশ আমার রুমে লুকিয়ে আছে ১০ দিন যাবত। আমার বাবা-মা কেও জানেনা যে আমি একটা ছেলেকে আমার রুমে লুকিয়ে রেখেছি।

আমার নাম অদ্রি। আর পলাশ হলো আমার ভালোবাসার মানুষ। আমরা একে অপরকে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসি।

পলাশের পরিবারে একটা সমস্যা হবার কারনে সে আমার রুমে লুকিয়ে থাকে।

আমার আলাদা রুম, আর রুমের মধ্যে টয়লেট থাকার কারনে পলাশের কোনো সমস্যা হচ্ছেনা। আমার রুমেও বাবা-মা কেও বেশি আসেনা।

যখন তারা আসে তখন পলাশ আসবাবের পিছনে লুকিয়ে পড়ে।

এখন রাত ১২টা বাজে। মা আমাকে ভাত দিয়ে গিয়েছে।

একই থালায় আমি আর দুজনে ভাত খাচ্ছি।

পলাশ কেমন জানি দুর্বল হয়ে গিয়েছে আগে থেকে। আগের মত কথা বলেনা, মজা করেনা।

ভাত খাওয়ার পরে আমার রুমের বারান্দায় গিয়ে পলাশ একটা সিগারেট টানতে শুরু করলো।

সে আগে সিগারেট খেতো না। ইদানিং খাওয়া ধরেছে।

আমি পলাশকে বললাম,

– ” এইভাবে আর কতদিন লুকিয়ে থাকবে?”,

– ” আর অল্প কিছুদিন।”

সিগারেট খেয়ে খাটে এসে শুয়ে পড়লো।

ইদানিং পলাশের শরীর অনেক ঠান্ডা। মনে হয় মৃত একজন মানুষ যার শরীরে রক্ত চলাচল হয়না। আর তার চেহারাটাও কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে।

আমি খাটে এসে পলাশের পাশে বসলাম।

পলাশ আমার একটা স্তনে হাত রাখলো। তারপর খুব গাড়ভাবে আমার ঠোটে চুমো দিলো।

সে আমার পুরো শরীরে উন্মাদ এর মত হাত দিতে লাগলো।

হঠাৎ বাবা এসে দরজায় ডাক দিলো।

পলাশ খাটের নিচে লুকিয়ে পড়লো।

বাবা এসে বললো,

– ” ঔষধ খেয়েছিস মা?”

আমি বললাম,

– ” তোমরা কেনো এমন করছো বাবা? আমিতো সম্পূর্ন সুস্থ, তাহলে তোমরা আমাকে রোজ রোজ ঔষধ খাওয়াচ্ছ কেনো?”

বাবা বললো,

– ” তুই সুস্থ নাইরে, মা। তাড়াতাড়ি ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়। আর দরজাটা খোলা রাখ।”

আমি ভয় পেয়ে গেলাম।

দরজা খোলা রাখলে তো তারা পলাশকে দেখে ফেলবে। তখন অনেক বড় সমস্যা তৈরি হবে। তাই আমি বললাম,

– “বাবা আমাকে একা থাকতে দাও। দরজা খোলা রেখে আমি ঘুমাতে পারিনা। প্রাইভেসি বলতে একটা জিনিস আছে। ”

-” আচ্ছা মা”

ঔষধ খাওয়ার পর বাবা চলে গেলো। আমি দরজা আটকে দিলাম।

পলাশ খাটের নিচ থেকে বের হয়ে আসলো।

পলাশ এখন খালি গায়ে। কিন্তু আমার মনে আছে ও খাটের নিচে ঢোকার সময় শার্ট গায়ে ঢুকেছিলো।

এইসব চিন্তা বাদ দিয়ে আমরা একটা খেলায় মত্ত হলাম।

যেটা সেই সৃষ্টিলগ্ন খেকে নর-নারীর মাঝে চলে আসছে।

.

—– পরের দিন —–

.

সকাল সকাল দরজায় মা এসে ডাকাডাকি শুরু করছে।

আমি বিরক্তের সুরে বললাম,

” ২ মিনিট।”

পলাশকে ঘুম থেকে জাগিয়ে লুকিয়ে পড়তে বললাম।

সে লুকিয়ে পড়লো।

দরজা খুলে দেখি লাবিব দাড়িয়ে আছে।

লাবিব আমার বন্ধু, সে আমাকে অনেক পছন্দ করে, জানিনা সে আমাকে ভালোবাসে কিনা।

লাবিব বললো,

-” আসতে পারি?”

আমি বললাম,

-” আসো।”

আমি জলদি করে মুখে পানি মেরে ওর সামনে এসে বসলাম।

বসার আগে রুমের দরজাটা আটকে দিলাম।

লাবিব বললো,

– ” তো কি খবর তোমার? কোনো খোজ-খবর পাচ্ছিনা তোমার বিষয়ে!”

– ” এইতো আছি কোনোরকম, তুমি?”

– ” ভালোই। ঔষধ ঠিক মতো খাচ্ছো?”

– ” জ্বি। খাচ্ছি।”

হঠাৎ লাবিবের দৃষ্টি যায় গতকাল পলাশের খাওয়া সিগারেটের ফেলে দেওয়া ফিল্টারের দিকে যা বারান্দায় পড়ে আছে।

লাবিব বললো,

– ” তোমাদের ঘরে সিগারেট কে খায়?”

আমি বানিয়ে মিথ্যা কথা বললাম,

– ” আমার বাবা মাঝে-মধ্যে খায় আরকি।”

– ” ও ভালো। ”

আমি লাবিবকে বললাম,

– ” আচ্ছা লাবিব তুমি এখন যাও। পড়ে কথা হবে। আমার অনেক কাজ আছে।”

ও আমার রুম থেকে চলে গেলো।

আমি দরজা আটকে দিলাম।

সে আমার রুম থেকে চলে গেলেও আমি তার এবং আমার মায়ের নিচুগলায় কথা বলার আওয়াজ শুনতে পেলাম ২০ মিনিট ধরে।

তারপর লাবিব চলে গেলো।

তারা নিশ্চয়ই আমার অসুখের বিষয়ে কথা বলেছে।

আমি পলাশকে বললাম,

– ” জানু, তুমি ঘরে থাকো আমি তোমার জন্য সিগারেট এবং কিছু খাবার নিয়ে আসছি।”

– ” আচ্ছা। তাড়াতাড়ি এসো। আমার একা থাকতে ভয় করে।”

আমি রুম থেকে বের হয়ে রুমে তালা মেরে দিলাম।

মাকে বললাম,

” মা আমি চাইনা তুমি আমার রুমে ঢুকে অযথা আমার রুম অগোছালো করে ফেলো তাই তালা মেরে দিলাম। আর আমার কিছু জিনিস লাগবে তার জন্য আমি দোকানো যাচ্ছি।”

মা আমাকে অনেকবার নিষেধ করার পরও আমি প্রায় জেদ ধরে দোকানে চলে আসলাম একা একা।

যা যা লাগবে তা সকল কিনে ফেললাম।

কেনো জানি আজকাল পলাশ আসার পর থেকে আমার কাছে সবকিছু অন্যরকম লাগে।

মনে হয় আমি অন্য জগতের বাসিন্দা।

.

—– রাত ১১ টা—–

.

পলাশ আর আমি বারান্দায় বসে বসে গল্প করছি।

পলাশের কথাগুলো সব অদ্ভূত অদ্ভূত।

সে নাকি আমাদের দৃষ্টিগোচরের বাইরেও অনেক কিছু দেখতে পায়।

যেমন এখন সে আমাকে একটা গল্প বলছে যেখানে মানুষ অমর থাকে কিন্তু তারা জন্ম নিতে পারেনা তাই তারা মৃত।

তার এইসকল কথাগুলোর কোনো মানে খুজে পাইনা আমি।

পলাশ বললো,

-” আচ্ছা, তুমি আমাকে ভালোবেসে কত কাল থাকতে পারবে?”

-” সারাজীবন।”

-” আচ্ছা আমাদের যদি একলা একটা দ্বিপে ছেড়ে দেওয়া হয় তাহলে ১০০ বছর কাটানোর পরও কি আমাদের ভালোবাসা একই থাকবে?”

আমি কিছু বললাম না।

পলাশ আবারো বললো,

-” পৃথিবীতে ভালোবাসা বলতে কিছুই নেই। সবই সাময়িক মোহ। একসাথে থাকতে থাকতে যখন বিপরীত শরীরের প্রতি আর যৌন আকর্ষন আগের মত কাজ করবে না তখন ভালোবাসা বাতাসের মত হাল্কা হয়ে যাবে। তখন থেকে যাবে শুধু সম্পর্কের বন্ধন। যেটা থেকে মৃত্যুই মুক্তি দেয়।”

এইরকম অনেক কথা বলার পর আমি আর পলাশ শুয়ে পড়লাম।

.

—– মাঝরাত —–

.

একটা তরল জাতীয় কিছু আমার মুখে পড়ার কারনে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো।

চোখ খুলে দেখলাম পলাশ ফ্যানের সাথে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে আছে।

তার জিবটা বের হয়ে আছে, চোখগুলো অনেক বড় আকার ধারন করেছে।

তার পুরো শরীরে আঘাতের চিহ্ন। মাথা থেতলে আছে। সেখান থেকে রক্ত পড়ছিলো আমার মুখে।

আমি একটা বিকট চিৎকার দিলাম।

———————-

অদ্রির চিৎকারের আওয়াজ শুনে তার বাবা-মা তার রুমের দরজা ভেঙ্গে যখন ভিতরে ঢুকলো তখন তারা দেখলো তাদের মেয়ে খাটে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে।

পুরো রুমটাই স্বাভাবিক ছিলো।

সেখানে ফাসিতে ঝোলানো রক্তাক্ত লাশতো দূরের কথা কোনো ছেলের চিহ্নমাত্র ছিলোনা।

তাহলে কি ছিলো সেখানে??

.

আমি কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি। আমার পাশেই লাবিব বসে আছে। লাবিবের কথা মতো সবাই রুম থেকে বের হয়ে গেছে।

আমি কাতর গলায় বললাম,

-” বিশ্বাস করো লাবিব,

পলাশ আমার রুমে ছিলো। ও আর আমি একসাথে আমার রুমে ১১ দিন ছিলাম।”

লাবিব বললো,

-” দেখো অদ্রি, আমি বুঝতে পারছি পলাশের মৃত্যুর কারনে তোমার মানসিক অবস্থা ভালো যাচ্ছেনা।”

-” তোমাদের আমি বারবার বলছি পলাশ মারা যায়নি। তোমারা কথাটা বিশ্বাস করছো না কেনো?”

লাবিব বললো,

-” আচ্ছা শোনো পলাশের বাবা-মা আসছে, তারাই তোমাকে বিষয়টা বুঝিয়ে বলবে।”

লাবিবের কথামতো একটু পরেই পলাশের বাবা-মা আসলো। তারা এসে আমাকে যা বললো তা হলো এইরকম,

.

১ মাস আগে একটা গাড়ি এক্সিডেন্ট হয়। সেই গাড়িতে আমি এবং পলাশ ছিলাম। ঘটনাস্থলে পলাশ মারা যায় আর আমার মাথায় আঘাত লাগে।

তাদের বলা কাহিনীটা এইরকম ছিলো।

একটু পরে লাবিব তাদের চলে যেতে বললো। তারা চলে গেলো।

আমি কান্না করতে শুরু করলাম।

একটু পরে বললাম,

-” আমাকে পলাশের মৃত্যুর ঘটনা জানানো হয়নি কেনো?”

লাবিব বললো,

-” তোমাকে জানানোর কোনো প্রয়োজন ছিলোনা। তুমি তার মৃত্যুর বিষয়টা জানতে। পলাশকে যেদিন কবর দেয়া হয়েছিলো সেদিন তুমি অস্বাভাবিক আচরন করা শুরু করেছিলে। তখন তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। ডাক্তার বলেছিলো, তুমি তোমার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছো। এই যে তোমাকে প্রতিদিন ঔষধ খাওয়ানো হয়েছিলো এইগুলো হচ্ছে মানসিক রোগিদের ঔষধ।”

-” কিন্তু আমার তো পলাশের মৃত্যু নিয়ে কিছুই মনে নেই!”

-” কারন তুমি মানসিক ভাবে একটা আঘাত পেয়েছিলে। বিষয়টা মনে না থাকাই স্বাভাবিক।”

-” কিন্তু লাবিব,,

আমার তো সেই সকল কিছু মনে আছে ১১ দিনের যা আমি আর পলাশ করেছিলাম একসাথে।”

-” দেখো আমি বলেছি তুমি মানসিক ভাবে আঘাত পেয়েছিলে আমি এটা বলিনি যে তুমি পাগল হয়ে গিয়েছিলে, তুমি সকল কিছুই বুঝতে, তবে তোমার বুঝতে পারার মাঝে ভুল ছিলো।”

-” কিন্তু আমার মাথায় আসছেনা, আমার সকল কিছু খুবই সুন্দর ছিলো। আমার মনে হচ্ছে আমি তখনই ভালো ছিলাম।”

-” দেখো অদ্রি, বিষয়টা আমি তোমাকে বুঝিয়ে বলি, বুঝতে চেষ্টা করো। সাধারণত, আমার যা চোখ দিয়ে দেখি তার সংকেত আমাদের মস্তিষ্কে যায়, কিন্তু তুমি মানসিকভাবে আঘাত পাওয়ার কারনে এবং তোমার মাথায় আঘাতের জন্য তোমার ক্ষেত্রে বিষয়টা হয়েছে উল্টো, তুমি প্রথমে যা কল্পনা করো, সেই কল্পনাটা তোমার মস্তিষ্ক থেকে চোখে গিয়ে তোমার সামনে একটা হেলুসিনেশন তৈরি করেছিলো, যা স্থায়িত্ব ছিলো অনেকদিন। মোট কথা সেই ১১ দিনের সকল কিছু ছিলো তোমার কল্পনা।বাস্তবে এমনটা ঘটেনি। তুমি এমনটা কল্পনা করেছো এর জন্য তোমার অবচেতন মন তোমার সামনে এমন একটা হেলুসিনেশন তৈরি করে রেখেছিলো।”

আমি বললাম,

-” আচ্ছা এমনটা কি হতে পারেনা যে তোমরাও আমার কল্পনা? তোমাদের অস্তিত্বও বাস্তবে নেই?”

লাবিব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

” সেটা তুমি খুব তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবে যে কে আসল আর কে নকল। কারন ডাক্তারের মতে তুমি এখন ৯০% সুস্থ। বাকি আছে আর ১০%। সেটাও খুব তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে।”

আমার মনে একটা প্রশ্ন উকি দিলো, আমি লাবিবকে বললাম,

-” আচ্ছা লাবিব তুমিতো আমার রুমে সিগারেটের ফেলে দেওয়া ফিল্টার দেখেছিলে। সেটাতো পলাশ খেয়েছিলো। একটা কল্পনা কি করে সিগারেট খেতে পারে?”

-” আমার খুবই ভালো লাগছে যে তুমি একটা যুক্তিসংগত প্রশ্ন করেছো। এর মানে এটা যে তোমার মস্তিষ্ক যুক্তি গ্রহন করা শুরু করেছে। আমি তোমাদের পাশের বাসার কিছু মানুষকে জিজ্ঞেস করার পর তারা উত্তর দিয়েছে যে তুমি নাকি বারান্দায় বসে বসে সিগারেট খাও আর নিজে নিজে কথা বলো। আর আমি তোমার রুম থেকে কিছু সিগারেটের ফিল্টারের ডিএনএ টেষ্ট করিয়েছি যেখানে তোমার ডিএনএ পাওয়া গেছে। আর তোমার আঙ্গুলের ফাকে হলুদ দাগ আছে, যেটা নিকোটিনের তৈরি। পলাশ

মাঝেমাঝে সিগারেট খেতো, তোমার মস্তিষ্ক কল্পনা করেছে যে বাসা থেকে পালিয়ে আসার পর যখন পলাশ তোমার বাসায় উঠবে তখন সে অনেক ধূমপান করবে। আর তুমি কল্পনাকে আংশিক বাস্তবতার রূপ দিয়েছো।”

লাবিব এবার থামলো।

আমি কান্না করতে শুরু করলাম।

লাবিব আবারো বললো,

” অদ্রি, যা হয়েছে সেটা একটা দুঃস্বপ্ন ছিলো। সেটাকে ভুলে যাও। তোমার বাবা-মা প্রতিদিন তোমার একা একা কথা বলা শুনতো। কিন্তু তারা তোমাকে বিষয়টা বুঝতে দেয়নি কারন ডাক্তার নিষেধ করেছিলো। তুমি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে এই আশা রাখলাম। খোদা হাফেজ।”

লাবিব চলে গেলো।

আর আমার গাল বেয়ে অশ্রু পড়তে শুরু করলো।

.

—– ১ মাস পর —–

.

আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। মাঝরাতে হঠাৎ আমি জেগে উঠি। আমি দেখি পলাশ আমার খাটে বসে আছে।

আমি বিষয়টা বুঝতে পারলাম না। আমি এখন পুরোপুরি সুস্থ, তারপরও পলাশ আমার সামনে কি করে আসলো! পলাশতো মারা গেছে ২ মাস আগে। আর সে আমার দুর্বল মস্তিষ্কের কল্পনায় কিছুদিন বেচে ছিলো।

আর আমার সুস্থ মস্তিষ্কের সামনে হেলুসিনেশন তৈরি হয়ে সে কি করে আসলো!

পলাশ হঠাৎ বলতে লাগলো,

-” আমি এবং তুমি আমরা দুজনই জানি আমি মারা গেছি। আমি বাস্তব না এটা সত্যি, আমি তোমার কল্পনা অদ্রি। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। তুমি কি করে একলা পৃথিবীতে পড়ে রইলে। আমি ইচ্ছে করলে পৃথিবীতে আসতে পারিনা কিন্তু তুমিতো পারো আমার কাছে সারাজীবনের জন্য চলে আসতে।”

আমি বললাম,

-” দেখো, তুমি কল্পনা, তুমি আর কিছুনা তুমি শুধুমাত্র কল্পনা, তুমি পলাশ ও না, তুমি আমার মস্তিষ্কের তৈরি কল্পনা।”

পলাশ বললো,

-” হ্যা আমি কল্পনা অদ্রি। কিন্তু এই পার্থিব পৃথিবীতে আমার অস্তিত্ব ছিলো এটা যেমন সত্য ঠিক তেমনি তুমি আমাকে আর আমি তোমাকে ভালোবেসেছিলাম। আমি অপেক্ষা করছি তোমার জন্য, আমি অপেক্ষা করছি অন্য দুনিয়ার দরজায় ভালোবাসা নিয়ে তোমার জন্য। আমি তোমার অবচেতন মনের তৈরি পলাশ, আমি তোমারই অংশ, আমি তোমার ভালোবাসার পলাশ, অপেক্ষা করছি তোমার জন্য। চলে এসো।”

পলাশ সামনে এগিয়ে এসে ঠিক আগের আমার একটি স্তনে হাত রাখলো,অন্য হাত দিয়ে আমার পিঠের অর্ধাংশ খামচে ধরলো,, তারপর অামার ঠোঁটে গাড়ভাবে চুমু দিলো।

কিন্তু চুমু যত গভীর হতে লাগলো, আমার নিশ্বাসও তত বন্ধ হতে লাগলো।।

আমি বুঝতে পারলাম, আমি নামের পাতাটা খুব তাড়াতাড়ি জীবন নামের গাছ থেকে খসে পড়বে।

.

—– পরের দিন—–

.

লাবিব অদ্রিদের বাসায়। তার কাছে অদ্রির বাবা কল করে বলেছে, তারা নাকি সকালে ডাকাডাকি করছিলো তখন অদ্রি দরজা খুলেনি। তারপর তারা দরজা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকে দেখে, অদ্রি তার উড়না দিয়ে গলায় ফাস দিয়েছে ফ্যানের সাথে। অদ্রির লাশের চারপাশে অনেকেই কান্না করছে।লাবিবের কান্না আসছে না। তার একটা কবিতা মাথায় ঘুরছে,

” নিত্য নতুন পুরানের এই খেলায়,

স্বয়ং সত্ত্বা হারাইয়াছি এই বেলায়।”

.

……সমাপ্ত……

.

ভুল গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

  • Related Posts

    আবছায়া

    আই. এ. পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেদিন ভর্তি হলাম সেদিন মনে ভারী ফূর্তি হল। বাস্ রে কত বড় বাড়ি। করিডরের এক প্রান্তে দাঁড়ালে অন্য প্রান্ত ধু-ধু করে। ঘরের পর ঘর,…

    বিকেলের দিকে

    এক-একটা দিন এমনিই কাটে। যেদিন সকাল থেকে মনে হয় আজ অনেক কিছু ঘটবে। সুন্দর কিছু। কিন্তু একঘেয়ে সেদিনও রাতে গড়িয়ে যায়। ঘটে না কিছুই। লাইট নিভিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল নীলা।…

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    You Missed

    প্রণয় প্রহেলিকা [পর্ব- ৩১]

    প্রণয় প্রহেলিকা [পর্ব- ৩১]

    সেদিন ও সে [পর্ব-০১]  

    সেদিন ও সে [পর্ব-০১]  

    বাহারি স্বপ্ন [পর্ব-৩০]

    বাহারি স্বপ্ন [পর্ব-৩০]

    প্রণয় প্রহেলিকা [পর্ব-৩০]

    প্রণয় প্রহেলিকা [পর্ব-৩০]

    তৃষিত তরঙ্গ [পর্ব-০১]

    তৃষিত তরঙ্গ [পর্ব-০১]

    বেশ্যার লাশ | সাধুর নগরে বেশ্যা মরেছে

    বেশ্যার লাশ | সাধুর নগরে বেশ্যা মরেছে