বাবা-মা লাভ ম্যারেজ করে বিয়ে করেছিল। জ্ঞান হবার পর, বাবা-মাকে একে অপরের সাথে কোনদিন কথা বলতে শুনিনি। একই বাসায় একই রুমে থাকে। বাবা মা কথা বলে হাতের ইশারায়।
বাবাকে প্রায়ই প্রশ্ন করতাম, বাবা তুমি মায়ের সাথে কথা বলোনা কেন?
বাবা আমার প্রশ্নের উত্তর কখনই দিতেন না। শুধু বলতেন, একদিন সবই বুঝবা। সেই একদিন আমার জীবনে এখনো আসেনি।
মাকেও একই প্রশ্ন করতাম। বাবার মতো মাও এড়িয়ে যেত আমার প্রশ্নের।
আমার বয়স দিন দিন বাড়ছে কিন্তু বাবা মায়ের সেদিকে কোন লক্ষ নেই। বাবাকে বললাম, বিয়ে করতে চাই। বাবা কিছু বললো না।
মায়ের কাছে গিয়ে বললাম, মা আমি বিয়ে করতে চাই। মাও কিছু বলল না।
মন খারাপ করে শুয়ে আছি। কিছুক্ষন পর বাবা রুমে এসে আমার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলল, একটা গল্প শুনবি?
আমি বল্লাম, কিসের গল্প?
বাবা বলল, তোর মায়ের সাথে কথা না বলার গল্প।
আমি লাভ দিয়ে উঠে বসে বসলাম। আগ্রহ নিয়ে বাবাকে গল্প শুরু করতে বলালম।
বাবা গল্প শুরু করলো……..
“ আমাদের বিয়ের কয়েক মাস পর দুপুরে শুয়ে শুয়ে ইমরান হাশমির আর ঐশ্বরিয়া রায়ের মুভি দেখতেছিলাম। খুবই রোমান্টিক মুভি।
হঠাৎ তোর মা এসে বলল, ‘মুভি দেখেও তো কিছু শিখতে পারো? কিভাবে বউকে ভালোবাসতে হয়!?
আমার মুডটা খারাপ হয়ে গেল। মুভি দেখায় বাধা পড়লে আমার মুড খারাপ হয়। বিয়ের পর থেকে শান্তি মতো একটা মুভিও দেখতে পারছিলাম না তোর মায়ের যন্ত্রনায়।
তোর মা আবারও বললো, ‘ইমরান হাশমিরকে দেখো! কি রোমান্টি পোলা, বউকে কত কেয়ার করে, কত যত্ন করে, কত ভালোবাসে।’
আমি কোন কথা বললাম না। মনযোগ দিয়ে চুপচাপ মুভি দেখায় মন দিলাম। মুভিটা বেশ ভালো লাগতেছে। ইমরান হাশমিরের রোমান্টিক মুভি আমার সবসময়ই ভালো লাগে।
তোর মা আবারও বলে উঠলো, বউকে কীভাবে ভালোবাসতে হয়, এবার বুঝতে পারছ?
নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না। মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল। রেগে গিয়ে বললাম, ‘ইমরান হাশমিরের এইটুক ভালোবাসা আর কেয়ারের জন্য কত পারিশ্রমিক পাইছে তা কি তুমি জানো?
তোর মা এবার তেলে বেগুলে জ্বলে উঠলো। মুখে যা আসছে তাই বলছে। মুহুর্তেই কঠিন ঝগড়ার পরিনত হলো। আমি তোর মাকে থামাতে পারছি না।
বাধ্য হয়ে একপর্যায়ে রাগ করে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম। বাসা থেকে একটু দুরে একটা পার্কে বসে আছি। কিছুক্ষন পর পাশের বাসার এক লোক ফোন করে বললো, তোর মা নাকি বিষ খাইছে।
আমি দ্রুত বাসায় গেলাম। তোর মা অজ্ঞান হয়ে আছে। তোর মাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হলো। কিছুক্ষন পর ডাক্তার এসে বলল, আর বিপদের কিছু নাই। পেটের সব বিষ বের করা হয়েছে। চাইলে এখনই দেখা করতে পারবো।
আমি ভেতরে যাওয়ার সাথে সাথে তোর মা আবার ঝগড়া করা শুরু করে দিলো, আমার মরা মুখ দেখার খুব শখ! তাই হাসপাতালের সামনেই দাঁড়ায়া রইছিলা! ফোন পাওয়া মাত্র দৌড়ে আসছো লাস দেখতে!।
কোন রকমে তোর মাকে শান্ত করে বললাম, “ তুমি শুধু আমাকে কেয়ার করতে শিখাও। কতবার বলছি, কিছু কেনার আগে ভালোভাবে দেখে কিনবে। ভেজাল জিনিসের ওপর বিশ্বাস রাখা ঠিক না। এহন বিষও গেল,
বিষ কেনার টাকাগুলাও জলে গেল।
তোর মা হাসপাতালের মধ্যেই ঝগড়া করতে শুরু করলো। আমাদের ঝগড়া দেখে পাশের রুম থেকে ডাক্তার দৌড়ে আসে।
ডাক্তার আমাদের মাঝে এসে ঝগড়া থামাতে চেষ্টা করলো। কিন্তু তোর মা ঝগড়া করবেই। ডাক্তার বলল, আপনারা একে অন্যের কাছে স্যরি বলেন।
তোর মা কিছুতেই স্যরি বলবে না। তাই আমিও স্যরি বললাম না।
ডাক্তার আমাদের দুজনকে শান্ত করার জন্য বললো ‘এখন যে আগে কথা বলবে, সেই প্রথমে স্যরি বলবে। বাসায় গিয়েও দুজনের মধ্যে যে আগে কথা বলা শুরু করবে, সে প্রথমে স্যরি বলবেন তারপর কথা বলবেন।’
এই কথা শুনে তোর মা চুপ হয়ে গেল। আমিও কোন কথা বললাম না। সেই থেকে তোর মায়ের সাথে আমার কথা বলা বন্ধ। তোর মায়েও স্যরি বলবে না, আমিও না। আমরা কেউ আগে স্যরি বলতে চাই না।”
বাবা হতাশার নিশ্বাস ছেড়ে বলল, এ থেকে কি বুঝলি?
আমিও হতাশার নিশ্বাস ছেড়ে বললাম, বাবা আমি জীবনে বিয়া করুম না।
রম্যগল্প




![প্রজাপতি আমরা দুজন [পর্ব-০৭]](https://amarlekha.com/wp-content/uploads/2025/07/photo_6212761625384044921_y.jpg)
![মেঘের দেশে প্রেমের বাড়ি [পর্ব-০৮]](https://amarlekha.com/wp-content/uploads/2025/10/3cf51236-2d29-45c2-a963-4d58a217fde2.jpg)
![নবোঢ়া: আগুনফুলের আত্মনিবেদন [পর্ব ৫৮]](https://amarlekha.com/wp-content/uploads/2025/05/IMG_20250529_231033.jpg)
![সেদিন ও তুমি [পর্ব-০২]](https://amarlekha.com/wp-content/uploads/2025/09/a-simple-light-colored-t-shirt-and-je.jpg)
![মেঘের দেশে প্রেমের বাড়ি [পর্ব-০৭]](https://amarlekha.com/wp-content/uploads/2025/07/srthgerf.jpeg)