দীপ্ত তৃপ্তি নিয়ে চটপটিটা খেলো। একটু ঝাল বটে, কিন্তু ভীষণ মজা। কিন্তু ঝামেলাটা হলো এক ঘন্টা পর, যখন তার পেট মুড়িয়ে উঠলো। শুধু রুম টু বাথরুম আর বাথরুম টু রুম। এক মিনিট যে বসবে তার উপায় নেই। যখন ই বাথরুম সেড়ে একটু জিড়িয়ে নিতে চায়, অবুঝ, অবাধ্য পেটটা পুনরায় মোচড় দেয়। বুঝে উঠতে পারছে না, এতো বিশ্রী ডিসেন্ট্রি হলো কেনো! একটা সময় ক্লান্ত হয়ে পড়লো দীপ্ত। ক্লান্ত, রুগ্ন, শক্তিহীন শরীরটি বসে পড়লো বাথরুমের মেঝেতে।
এদিকে দীপ্ত এর ঘরের বাহিরে ঘাপটি মেরে অবস্থান করছিলো জমজেরা। কান পেতে শুনছিলো দীপ্তের প্রতিটি গতিবিধি, যেনো কোনো নামকরা গোয়েন্দা টিমের সদস্য। যখনই দীপ্তের ঘরের বাথরুমের পুরোনো জং ধরা দরজার শব্দ পাচ্ছিলো তাদের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠছিলো। একে অপরের পিঠ চাপড়ে বাহবা দিচ্ছিলো। আসলে দীপ্তের এই পেট মোচড়ের কৃতিত্ব সম্পূর্ণ জমজের। সেদিনের গোবড়কান্ডের পর রুবি তাদের সদর দরজার বাহিরে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলো প্রায় সাড়ে চার ঘন্টা। সেই সময়ে ঘরে যারাই প্রবেশ করছিলো এই দুজনের অবস্থা দেখে না চাইতেও মুখ টিপে হাসছিলো৷ ব্যাপারটা অপমানজনক। দীপ্ত যদি সেই সময় ওদের পাশে না দাঁড়াতো ওদের গোবড়কান্ড ফাঁস হতো না, কেউ জানতো না, শাস্তি ও পেতে হতো না। ফলে দীপ্তের প্রতি অসামান্য ক্ষোভ জন্মেছে তাদের। এমনিতেও দীপ্ত দিনকে দিন চক্ষুশূল হয়ে উঠছে তাদের৷ ভীষন সন্দেহ হয়। মতিগতি কিছু সুবিধের নয়। ফলে সেদিনের শোধ তুলতেই এই চটপটি বুদ্ধি বের করলো এশা। রহমত পাড়ার বিখ্যাত চটপটিতে মিশিয়ে দিলো নিজের তৈরি ফর্মূলা নম্বরা ২০৩। যদিও আশা বেশি পরিমাণ মিশাতে চেয়েছিলো, তখন এশা বাধা দিয়ে বললো,
“বেশি না, কম মিশা। যেনো অন্তত ১০-১২ বার হয়”
“এতো কম কেন? চেরাগআলীর জন্য সাড়ে চার ঘন্টা ভুতের মতো দাঁড়িয়ে ছিলাম। ওকেও সাড়ে চারঘন্টা বাথরুমে কাটাতে দে”
“একেবারে না, পাখিকে খেলিয়ে খেলিয়ে মা’র’বো। ওই ব্যাটা ঘুঘু দেখেছে ফাঁ’দ দেখে নি। আমরা ওকে ফাঁদে ফেলে বোঝাবো কত ধানে কত চাল! আর একেবারে এতো দিলে সন্দেহের মুখোমুখি হবো। বার কয়েক হলে এটা স্বাভাবিক মনে হবে। এমনেও ব্যাটা বিদেশী মাল, দেশী খাবার পেটে সয় না। দেখিস নি, মিনারেল পানি বাদে খেতে পারে না। তুই যদি বেশি দিস আমাদের জ’ল্লা’দ মা বুঝে যাবে। আর ওই চেরাগআলী ও আমাদের উপর ভরসা করবে না। এটা হতে দেওয়া যাবে না। ধীরে ধীরে ওকে বোঝাতে হবে। আর ফর্মূলা ২০৩ ই তো সব নয়। ওর উপর ফর্মূলা ৩০৩, ৪২০ ও এপ্লাই করবো। শুধু সময় আসতে দে”
এশার কথা শুনে পৈশাচিক হাসি হাসে আশা। হিং’স্র প্রাণী যখন বহু খোঁজের পর তার শিকারকে খুঁজে পায় তখন যেমন তাদের চোখ চকচক করে, জমজদের চোখ ও চকচক করছে। তারা দুজন মিলে “হু হাহা” করে পৈশাচিক হাসি দেবার চেষ্টা করলো। কিন্তু হলো না, স্বরে টান লাগায় উভয় ই কেশে উঠলো। তবে তাদের মনে প্রফুল্লতা কমলো না। দীপ্তকে না’কে দ’ড়ি দিয়ে ঘুরাবার আনন্দ যেনো অমূল্য
ডাইনিং টেবিলে সকলে একত্রিত হলো। আজ একটি বিশেষ দিন। আজ জীবনে প্রথমবারের মতো ধারা রান্না করেছে। মামা বাড়িতে সর্বদা আদর এবং স্নেহে মানুষ হবার দরুন রান্নাঘরে কারণ ব্যাতীত যাওয়া পড়ে নি তার। ধারার মনে আছে, সে যখন ক্লাস টেনে পড়তো অতি উৎসাহী হয়ে নানাভাই কে নিজ হাতে রান্না করে খাওয়াবার জিদ ধরে। বড়মার হাজারো মানার পর ও সে রান্না করে। রান্না যেমন ই হোক না কেনো, গোল বাধে যখন ডিম ফু’টে তেল ছি’টে পড়ে ধারার হাতে। বেশ ক জায়গায় গরম তেল পড়ায় পু’ড়ে যায়। ফলে সুভাসিনী বেগম এবং জামাল সাহেব কড়া নিয়ম জারি করে, ধারার প্রয়োজন ব্যতীত রান্না করার প্রয়োজন নেই। তার পর থেকে চা বানানো ব্যতীত কোনো রান্না ধারা করে নি। তবে আজ করছে। করছে কেবল অনলের জন্য। সুভাসিনী বেগম গাইগুই করেছেন বহুবার। কিন্তু ধারা শুনে নি। অনলের পছন্দের খাবার রান্না করবে সে। অনলের বরাবরই খিঁচুড়ি, ডিমভুনা এবং বেগুনের আঁচার বড্ড পছন্দ। উপরন্তু আজ বর্ষার দিন। বৃষ্টির ভেজা রাতে খিঁচুড়ি না হলে যেনো বাঙ্গালীর মন ভরে না। তাই ধারাও নিজের প্রণয়নের জন্য রান্না করলো এই তিনপদ। জামাল সাহেব অতি উৎসাহী, যদি ও হার্টের ব্যামোর জন্য ডিমের কুসুম অংশ, ঘি খাওয়ায় তার বাধ্যবাধকতা আছে। তবুও ধারারানীর হাতের রান্না সে খাবেই। ধারা সকলকে বেড়ে দিলো খাবার। অনলের দিকে তাকিয়ে আছে সে অধীর আগ্রহে। টেবিলে নিজের কিশোরী বউ এর সন্ধ্যা থেকে করা কষ্টের অমূল্য ফল দেখে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো অনলের। একমুগ্ধতা নিয়ে তাকালো সে ধারার দিকে। অনলের হাসি লেপ্টানো মুখখানা দেখে সকল কষ্ট পরিশ্রম যেনো সার্থক মনে হলো ধারার। অনল সকলের দৃষ্টি এড়িয়ে নিজের পাশের চেয়ার খানা একটু সরিয়ে দিলো। বোঝালো, “এখানে এসে বস”। ধারাও সেই ইঙ্গিত অনুসরণ তার পাশে গিয়ে বসলো। ধারা বসতেই অনলের রুক্ষ্ণ হাতটা তার কোমল হাতটি আয়ত্ত করে নিলো। এতোসময় পানির কাজ করায় হাতটি ঠান্ডা হয়ে আছে। ফলে অনলের হাতের উষ্ণতা নিমিষেই ছড়িয়ে পড়লো ধারার হাতে। ধারা মাথা নামিয়ে নিলো। ভীষণ লজ্জা তাকে ভর করেছে। এরমাঝেও যেনো একরাশ ভালোলাগা মিশে আছে।
জামাল সাহেব খাবার মুখে তুললেন। খাবার খেয়েই তার চোখ টলমল করে উঠলো। ভেতরটা আবেগে আপ্লুত হয়ে উঠলো অজান্তেই। প্রয়াত মেয়ের কথা মনে পড়ছে। প্রতিটি বাবার কাছে তার মেয়ের রান্না মায়ের রান্নার সমতূল্য। সুরাইয়ার রান্নাও জামাল সাহেবের অতিপ্রিয় ছিলো। অতি সচেতন মানুষটিও তখন অসচেতন হয়ে যেতো, গোগ্রাসে গিলতেন মেয়ের রান্না। আজ এতোটা বছর পর তার মনে হলো তিনি সুরাইয়ার হাতের রান্না খাচ্ছেন। ফলে অজান্তেই পেটের সাথে মনটিও তৃপ্ত হয়ে উঠলো।
এর মাঝেই ডাইনিং এ উপস্থিত হলো দীপ্ত। তার শুভ্র চেহারাটি মূর্ছা গেছে, কোকড়ানো বাদামী চুল ঘামে অবিন্যস্ত হয়ে আছে। চোখগুলো নিস্প্রভ, ঠোঁটজোড়া শুকনো। দেখে মনে হচ্ছে যেনো ঝড় চলে গেছে তার উপর। তাকে দেখেই সুভাসিনী বেগম শুধালেন,
“দীপ্ত খাবে না?”
“না আন্টি, আই এম নট ফিলিং ওয়েল। পেটটা ভালো নেই”
“এ বাবা ডাইরিয়া হলো নাকি?”
“মে বি?”
“তুমি কি কিছু উলটা পালটা খেয়েছিলে?”
দীপ্ত এবার জমজদের দিকে করুন দৃষ্টিতে চাইলো। কিন্তু তারা নির্বিকার। বরং উলটো অতি আগ্রহী চাহনীতে দীপ্তের দিকে চেয়ে রয়েছে। দীপ্ত একটু রয়ে সয়ে বলল,
“টুইন্স গেভ মি এ বাউল অফ চটপটি। সেটা এই পাড়ায় ফেমাস নাকি! ওটাই খেয়েছিলাম। তারপর থেকে এই অবস্থা?”
“তুমি চটপটি খেতে গেলে কেনো? তোমার বিদেশি পেটে কি অগুলো সইবে?”
দীপ্তের কথা শেষ না হলেই ফট করে কথাটা বলে উঠলো ইলিয়াস। ইলিয়াসের কথা শুনে মুখশ্রীতে বিজ্ঞ ভাব টেনে এশা বললো,
“ও, দাদাজান এই ঘটনাকেই কি বলে “কু’ত্তার পেটে ঘি সয় না”?
এশার কথা কর্ণপাত হতেই হো হো করে হেসে উঠলেন জামাল সাহেব। উপস্থিত সকলেও হাসি কোনোমতে আটকালো। দীপ্ত খেয়াল করলো ধারা দু হাত দিয়ে মুখ চেপে বসে রয়েছে। সে কোনো মতেই নিজ হাসি আটকাতে পারছে না। প্রবাদটির অর্থ না জানলেও দীপ্ত ঠিক বুঝলো এটার অর্থ বেশ সুবিধার নয়। নিজের করুন অবস্থাতে বেশ লজ্জিত হলো সে। শুভ্র মুখশ্রীটা লজ্জা এবং অপমানে কালচে বর্ণ ধারণ করলো। এশা তখন বিনয়ী স্বরে বললো,
“দীপ্ত ভাই, আমি কিন্তু আপনাকে কু’ত্তা বলি নি। আসলে প্রবাদ তো, বই তে পড়েছি। সেটাকে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করার চেষ্টা করলাম মাত্র। আপনি কিন্তু রাগ করবেন না। আসলে বুঝিতে পারি নি আপনার পেট খারাপ হবে। জানলে কখনোই চটপটি দিতাম না। ভাবলাম বৃষ্টির দিন সবাই যেহেতু খাচ্ছে আপনিও উপভোগ করুন। কিন্তু এতে যে আপনার এই হাল হবে কে জানতো! সরি”
দীপ্ত নিস্প্রভ, মলিন হাসি হাসলো। নিজের অবস্থার জন্য তো বাচ্চা মেয়ে দুটোকে দায়ী করা যায় না, যেখানে তারা তো বন্ধুত্বের হাত বাড়াতে এসেছিলো। ধারা নিজের হাসি আটকাতে পারছে না, সে তো জানে তার মামাতো বোনেদের প্রখ্যাত স্বভাব। দীপ্তকে দেখে প্লাবণের কথাটা স্মরণ হলো। না চাইতেও শব্দ করে হেসে উঠলো সে। তাকে থামাতে অনল তার হাটু চেপে ধরলো। ইশারা করে বোঝালো, “হাসি বন্ধ”। কিন্তু ধারা তো ধারা, মুখ চেপে হাসতে লাগলো অনবরত। এর মাঝে জামাল সাহেব বাজখাঁই কন্ঠে বলে উঠলেন,
” সুভাসিনী”
“জ্বী, আব্বা?”
“এই বিদেশী ফকিরটারে একটু চিড়া আর দই মাখায় দাও। আমি চাই না, কেউ বলুক জামালের বাড়িতে মানুষ না খাইয়া ঘুমায়। আর ওরে কও স্যালাইন খাইতে, সামান্য চটপটি যে খাইতে পারে সে আইছে আমগোর দেশে। হাহ, যতসব”
সুভাসিনী তাই করলো, একটা বাটিতে চিড়া আর দই মেখে দিলো। দীপ্ত কৃতজ্ঞতার হাসি হাসলো। এতোসময় বাথরুম টু ঘর আর ঘর টু বাথরুম করে সত্যি ক্ষুদা লেগেছিলো, কিন্তু খিঁচুড়ী দেখে ভয়ে খেতে চাচ্ছিলো না। বলা তো যায় না, রাতটা না বাথরুমেই কাটে_
খাবার শেষে জমজেরা নিজের ঘরে যেতে ধরলে ধারা তাদের খপ করে ধরলো। চোখ ছোট ছোট করে সন্দীহান কন্ঠে বললো,
“সত্যি করে বল তো, চটপটিতে কি মিশিয়েছিস? ফর্মূলা ২০৩?
“ধারাপু এটা ঠিক নয়, তুমি বরাবর আমাদের সন্দেহ করো। আমরা কি কাউকে বিনা কিছু মিশিয়ে দিয়ে পারি না? আমরা সত্যি অনুতপ্ত!”
ভীষণ করুন গলায় বললো আশা। এশা ও চোখগুলো আহত বিড়ালের মতো করে রাখলো। তাদের করুন মুখশ্রীতেও ধারার মন গললো না। ঝাঁঝালো স্বরে বললো,
“মার কাছে মাসির গল্প দিও না। সত্যি করে বল! আমি কিন্তু ছোট মামীকে বলে দিবো। এবার কান ধরিয়ে পাঁড়ার ল্যাম্পপোস্টে দাঁড় করাবে”
“থাক আশা, এই নির্দয় মহিলা আমাদের কথা বিশ্বাস করবে না। ছেড়ে দে”
হতাশ দুঃখভরাক্রান্ত কন্ঠে কথাটা বললো এশা। আশাও তাল মিলালো,
“এটাই যা’লি’ম সমাজ, সত্যের দাম নেই। আমাদের মতো অসহায়রা কোথায় যাবে”
ধারার না চাইতেও হাসি পেলো, কিন্তু নিপুন ভাবে তা গোপন করে গেলো। নিজের বোনদের এই নাটক তার জানা। এই দুটোর হাড় নয়, অস্থিমজ্জাও তার পরিচিত। এর মধ্যেই পুরুষালী গম্ভীর কন্ঠ কানে আসে,
“কি রে! গান্ধীর তিন বা’দ’র এখানে জট পাকিয়েছিস কেনো?”
অনল তখন দীপ্তকে ঔষধের বাক্স দিয়ে এসেছে। অনলের কথা শুনে তিনজন সোজা হয়ে দাঁড়ায়। ধারা গম্ভীর কন্ঠে বলে,
“জিজ্ঞাসাবাদ চলে, এই দুটোর চটপটি কারসাজির জিজ্ঞাসাবাদ”
এশা আশা শুকনো ঢোক গিলে। অনলের সামনে তাদের সব অভিনয়গুলো যেনো হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। ভেবেছিলো অনল ভাইও হয়তো জিজ্ঞাসাবাদ করবে। কিন্তু তাদের অবাক করে অনল বলে,
“যা করছিস কর, ধরা পড়িস না। আর একটা কথা, চোখ কান খোলা রাখবি। ওই দীপ্ত যেনো আমার বউ এর ত্রিসীমানায় না থাকে। মনে থাকবে?”
“আই আই ক্যাপ্টেন”
বলেই দুটো একসাথে অনলকে স্যালুট দেয়। অনল ঠোঁট বাকিয়ে হাসে। তারপর ধারার হাতটা নিজের হাতের ফাঁকে নেয় এবং পা বাড়ায় নিজ ঘরের দিকে। অনল চলে গেলে আশা এশাকে ধাক্কা দিয়ে বলে,
“বুঝলি কিছু?”
“হুম, বুঝছি”
“কি?”
“অনল ভাই এর মাথা গেছে”
নিজ রুমে আসতেই ধারা অনলের টিশার্টের কোনা টেনে ধরে। ধারার এমন আচারণে খানিকটা প্রফুল্ল হলেও তা প্রকাশ করে না অনল। স্বাভাবিক কন্ঠে বলে,
“কি চাই?”
“রান্না কেমন ছিলো?”
ধারা লাজুক স্বরে কথাটা বলে। যেনো কোনো নববধু তার স্বামীর মুখে নিজের প্রশংসা শুনবার জন্য অধীর হয়ে আছে। ওড়নাটা নিজ হাতের ফাঁকে নিজে দলা পাকাতে পাকাতে বললো,
“আমি তোমার জন্য রান্না করেছি। বললে না তো রান্নাটা কেমন হয়েছে?”
অনল সময় নিলো। কিছুসময় অপলক নজরে তাকিয়ে রইলো সামনে দাঁড়ানো কিশোরী মেয়েটির পানে। সে প্রতীক্ষিত। প্রতীক্ষা ভালোবাসার মানুষটির মুখে নিজের প্রশংসা শোনার। যদিও খিঁচুড়িটি হালকা লবণ ছিলো, ডিমভোনায় হালকা ঝাল বেশি হয়েছিলো আর বেগুনের আঁচার ঈষৎ পুড়ে গিয়েছিলো; কিন্তু খাবারগুলো ধারার ভালোবাসায় ছিলো পরিপূর্ণ। মেয়েটি সন্ধ্যা থেকে ধৈর্য্য ধরে রান্নাটা করেছে। অনল স্মিত হাসলো। অনলের বলতে ইচ্ছে হলো,
“খাবার এতো সুস্বাদু হয়েছে যে আমার ইচ্ছে করছিলো রাধুনীর হাতে একটা শীতল চুমু একে দেই”
কিন্তু সেটা সে বললো না। উলটো একটা দুষ্ট বুদ্ধি চাপলো মাথায়। স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,
“মন্দ হয় নি, খাওয়া যাচ্ছিলো বটে। তবে এতোটা কষ্ট করে রাধলি একটা পুরস্কার তো পাওনা তোর”
“কি পুরষ্কার? কি দিবে আমায়?”
উৎসাহী কন্ঠে বললো ধারা। অনল একটু থেমে বললো,
“চোখ বন্ধ কর, সারপ্রাইজ বলে কথা”
ধারা সাথে সাথে চোখ বুজলো। মস্তিষ্কে হাজারো কল্পনা জাগলো। কি হতে পারে সারপ্রাইজ? কি দিবে অনল ভাই? বেলীর মালা! নাকি একজোড়া নুপুর! নাকি ধারার অতি পছন্দের এক পাতা কাগজের টিপ! নাকি গোছা কয়েক রেশমি চুড়ি! ধারা বই তে পড়েছিলো, নায়কেরা নায়িকাদের চমকে দিতে নানারকম উপহার দেয়। নায়িকার মুখে হাসি ফোটার জন্য কেউ কেউ তো অঝর বর্ষায় ভিজে নিয়ে আসে বছরের প্রথম ফোটা সিন্ধুপুষ্প। অনল ও কি তেমন হবে! আসলে আত্মদাম্ভিক, কঠিন, জেদী মানুষটি অকপটে প্রেম নিবেদন করলেও প্রণয়ের প্রকাশটি করবার ধরণ তার বড্ড বিচিত্র। তার ভালোবাসার ধরণ বড্ড বিচিত্র। কাছে আসার আগ্রহটি যেনো ধারার ই বেশি। অনল বরাবরের মতোই নির্লিপ্ত। ধারা উন্মুখ হয়ে আছে তার সারপ্রাইজের জন্য। মিনিট পাঁচেক বাদে অনল বললো,
“হাত এগিয়ে দে”
ধারা মন প্রফুল্ল হয়ে উঠলো। হাতখানা নির্দ্বিধায় এগিয়ে দিলো। অনল তার হাতে কিছু রাখলো। যার ভারে হাত ভেঙ্গে আসার জোগায়। ধারা সাথেই চোখ খুললো। চোখ খুলতেই তার মুখ বিস্ম্যে হা হয়ে গেলো। অবাক কন্ঠে বললো,
“এগুলো কি?”
“ইংলিশে বলে নোট আর খাস বাংলায় বলে চোঁ’থা”
ধারায় মাথায় যেনো আগুন জ্বললো। এই মানুষটা এমন কেনো! তার জন্য গরমে ঘেমে নেয়ে এতো সময় রান্না করেছে আর সে কি না এই বস্তা ভর্তি গণিতে ভরা কাগজ ধরিয়ে বলে এটা সারপ্রাইজ। ক্ষিপ্ত কন্ঠ বললো,
“তুমি এমন আনরোমান্টিক কেনো বলতো? একদম খা’চ্চ’র, বেরসিক, চরম আমরোমান্টিক একটা বর। কার বর তার বউ কে উপহার স্বরুপ এই নোটপত্র দেয়, শুনি?
কাগজের স্তুপ সজোরে টেবিলে রাখলো সে। ধারা রীতিমতো রাগে ফুসছে। তার চোখ মুখ রক্তিম বর্ণ ধারণ করলো। অনল মুগ্ধ নজরে তার বউ কে দেখলো কিছুসময়। তারপর এগিয়ে এসে তার চোখে চোখ রেখে নরম স্বরে বললো,
“তা আমার বউ এর ঠিক কেমন রোমান্টিক স্বামী চাই?”………
চলবে,..
- মুশফিকা রহমান মৈথি


![প্রজাপতি আমরা দুজন [পর্ব-০৭]](https://amarlekha.com/wp-content/uploads/2025/07/photo_6212761625384044921_y.jpg)
![মেঘের দেশে প্রেমের বাড়ি [পর্ব-০৮]](https://amarlekha.com/wp-content/uploads/2025/10/3cf51236-2d29-45c2-a963-4d58a217fde2.jpg)
![নবোঢ়া: আগুনফুলের আত্মনিবেদন [পর্ব ৫৮]](https://amarlekha.com/wp-content/uploads/2025/05/IMG_20250529_231033.jpg)
![সেদিন ও তুমি [পর্ব-০২]](https://amarlekha.com/wp-content/uploads/2025/09/a-simple-light-colored-t-shirt-and-je.jpg)
![মেঘের দেশে প্রেমের বাড়ি [পর্ব-০৭]](https://amarlekha.com/wp-content/uploads/2025/07/srthgerf.jpeg)