সকলের একটাই কথা,
“শেষমেশ বাচ্চার কাছেই হৃদয় হারালি?”
অনল তখন গর্বের সাথে বললো,
“তাহলে বুঝে দেখ আমার বউটি কতো গুণী, আমার হৃদয় চুরি করা যার তার কাজ নয়।”
ধারা তো লজ্জায় পারলে মিশে যায়৷ না চাইতেও এতোবড় অনুষ্ঠানের মধ্যমনি সে৷ এর মাঝেই একজন বলে উঠে,
“অনন্যা দেশে ফিরেছে, জানিস?”
অনন্যার কথাটা কর্ণপাত হতেই অনলের হাসিটা মিলিয়ে গেলো। হাসিখুশি মুখখানা হয়ে উঠলো গম্ভীর। নামটিকে যেনো সহ্য হয় না তার। এতোটা বিরক্তিও কোনো মানুষের প্রতি আসতে পারে জানা ছিলো না। ঈষৎ বিরক্তিভরা কন্ঠে বললো,
“তা আমি কি করবো?”
যে ব্যাক্তিটি কথাটা বললো সে অনলের প্রত্যুত্তোরে খানিকটা ভড়কালো, ঘাবড়ালো। রয়ে সয়ে বললো,
“ও এখানে আসছে তো তাই বললাম। আসলে পরশু ওর সাথে ফোনে কথা হলো। সপ্তাহ খানেক হয়েছে দেশে এসেছে। রি-ইউনিয়নের কথা উঠতেই উচ্ছ্বাসিত হয়ে উঠলো। আমিও বললাম চলে আয়। ও এখন অন দ্যা ওয়ে”
কথাটা শেষ হতে হতেই ব্যাক্তিটি বললো,
“নাম নিলাম আর অনন্যা হাজির”
বলেই রুমের গেটের দিকে তাকালো। কালো শাড়ি পরিহিত নারীর আগমন ঘটলো। সৌন্দর্য জিনিসটা চোখের ধাঁধা। কিন্তু মেয়েটির সৌন্দর্যটি চোখের ধাঁধা নয়। হলুদ ফর্সা বর্ণের নারীটির টানা টানা চোখের প্রেমে অনেক পুরুষই তার হৃদয় দিয়েছিলো। পাতলা ঠোঁটের টোল পড়া হাসির কাতর অনুভূতিতে মগ্ন ছিলো অনেকেই। ঘন কালো চুলগুলো খোঁপায় আটকে রেখেছে। এখনো মনে হচ্ছে নারীটি তার যৌবনের শীর্ষে আছে। নারীটি ই অনন্যা। ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে সুন্দরী নারী। তার ক্রাশ লিস্ট গুনে শেষ করা যায় না। ধারা অপলক নজরে তাকিয়ে রইলো নারীটির দিকে। আভিজাত্য তার চলনে। সত্যি ই যেনো কেট মিডেল্টন। ধারা আড়চোখে তাকালো অনলের দিকে। তার ভ্রু কুঞ্চিত৷ মুখশ্রী কঠিন। দৃষ্টি তীক্ষ্ণ। কি চলছে তার মনে! তখন ই স্মৃতি তার হাত ধরে বললো,
“এখানে এদের মাঝে বোর হবে ধারা। এদিকে আসো”
তার সাথে রবিনের বান্ধবী তানিও ছিলো। ধারা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। তারপর তাদের সাথে প্রস্থান করলো। তবে অনন্যার সাথে কথা বলার ইচ্ছেটা রয়েই গেলো।
অনল এখনো চেয়ে রয়েছে অনন্যার দিকে। মেয়েটিকে বহুবছর দেখছে সে। কিন্তু অন্তস্থলে জড়ো অসীম ক্রোধগুলো যেনো এখনো জীবন্ত৷ স্মৃতিগুলো এখনো তপ্ত। বাহ্যিক সৌন্দর্য্যে মানুষ মোহিত হয় কিন্তু ভেতরের কুৎসিত হৃদয়টা এড়িয়ে যায়। অনন্যার ক্ষেত্রেও সেটি প্রযোজ্য। চিন্তার ঘোরে ছেদ পড়ে যখন রবিন তার ঘাড়ে হাত রেখে বিদ্রুপের স্বরে বললো,
“তাহলে অনন্যার সাথে দেখাটা হবেই। ভাই তুই তো গেছিস! এক দিকে বউ অন্য দিকে প্রাক্তন!”
রবিনের কথায় ভ্রু কুঞ্চিত হলো অনলের৷ কাঠ কাঠ গলায় বললো,
“প্রাক্তন মানে? শুধু বান্ধবী! তাও কিছুদিনের”
“তাই নাকি! তা ওই যে রান্না করে আনতো! তোর পেছনে ঘুরতো! লাইব্রেরির মূহুর্ত!”
রবিনের কথা শেষ হতেই অনল আড়চোখে ধারার দিকে তাকায়। সে তানি এবং স্মৃতির কাছে গল্পে মশগুল। অর্থাৎ রবিনের আজগুবি কথাগুলো সে শুনে নি। অনল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“তোর মতো বন্ধু থাকলে শত্রুর অভাব হয় না। চুপ করে যা! নয়তো তোমার কলস ভাঙ্গতে সময় লাগবে না। তানি জানে লেডিস হোস্টেলের নিচে দাঁড়িয়ে শশীর জন্য মেডিসিন কিনে দেওয়া? নোট পাস করা! জানে?”
এবার কেশে উঠলো রবিন৷ মাথা চুলকে আমতা আমতা করে বললো,
“ছাড় না, অতীত তো!”
“ও, তোমার বেলায় অতীত। আর আমার বেলায় প্রাক্তন, তাই না? কান খুলে শুনে রাখ, অনন্যা শুধু আমার বান্ধবী ছিলো৷ ও আমাকে পছন্দ করতো এটা ওর ব্যাপার। আমার মাথা ব্যাথা নয়। শুধু শুধু আমার ছোট বউ এর মাথায় আজাইরা কিছু ঢুকাবি না। নয়তো তোর বিয়ে হবার আগেই ভেঙ্গে দিবো”
অনলের হু’ম’কি কাজে দিলো। প্লাবণ এবং ইকরাম হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাবার অবস্থা। রবিনটাকে কখনোই নিয়ন্ত্রণে আনা যায় না। কিন্তু প্রেমে পড়ে আজ সেও কাঠির মতো সোজা হয়ে গেছে। প্লাবণ টপিক বদলায়। কারণ সে জানে অনন্যার টপিক আরেকবার উঠলে অনলের মেজাজ বিগড়াবে৷ দেখা যাবে সব ছেড়ে বাড়ি চলে যাবে। অনল ও আর মাথা ঘামালো না। জীবনে এমন অনেক মূহুর্ত আসে যখন চরম অপছন্দের মানুষের মুখোমুখি হতে হয়। এটা তো হবার ই ছিলো। তাই বিষয়টা এড়িয়ে যাওয়ায় বুদ্ধিমানের। এতো সুন্দর সন্ধ্যা নষ্ট করার মানে নেই।
দেখতে দেখতে সময় পেরিয়ে গেলো। খাওয়া দাওয়া সেরে অনল ধারার হাতটি নিজের মুঠোবন্দি করে বললো,
“কেমন লাগলো?”
“ভালো”
“তাহলে যাওয়া যাক”
“হু”
অনল এবং ধারা সকলকে বিদায় দিয়ে প্রস্থান ই করবে এমন সময় একটি চিকন নারী কন্ঠ শোনা গেলো,
“অনল”
কথাটা শুনতেই পিছনে ফিরলো ধারা। অনন্যা তাদের দিকেই এগিয়ে আসছে। ধারা তার শার্ট টেনে বললো,
“আপুটা তোমাকে ডাকছে বোধ হয়”
অনল তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো অনন্যার দিকে। না চাইতেও এখন ভদ্রতার খাতিরে কথাটা বলতেই হবে। অনন্যা তাদের সামনে দাঁড়িয়ে স্মিত হাসলো। তারপর বললো,
“তুই চলে যাচ্ছিস? অথচ আমাদের তো কথাই হলো না।”
অনল উত্তর দিলো না। তার মেজাজ সংবরণ করা কঠিন হয়ে গিয়েছে। অনন্যা অনলকে মৌন থাকতে দেখে ধারার দিকে তাকালো। কৌতুহলী কন্ঠে বললো,
“তুমি অনলের বউ?”
“জ্বী, আমি ধারা”
“আমি অনন্যা। তোমার স্বামীর খুব ভালো বন্ধু, যদিও একটু মনোমালিন্য চলছে। তোমার বর একটু রেগে আছে আমার উপর”
বলেই হাত বাড়িয়ে দিলো। ধারাও তার সাথে হাত মিলালো। অনল এখন ও মৌন। অনন্যা একটু থেমে বললো,
“এখনো আমার উপর রাগ করে আছিস? ব্যাপার না৷ দেশে যখন ফিরেছি তোর রাগটাও ভাঙ্গিয়ে দিবো। ভুল আমার ছিলো। আমি মানছি। কিন্তু এই পুরোনো কথাগুলো ছেড়ে দে। আমরা আবার ফ্রেন্ড হতেই পারি।”
“আমার যে স্বার্থপর মানুষ পছন্দ নয় অনন্যা। যারা আমার মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে খায় তাদের থেকে আমি দূরে থাকি। চল ধারা। মাথা ব্যাথা করছে”
কাঠ কাঠ কন্ঠে কথাগুলো বললো অনল। তারপর ধারার হাত ধরে বেড়িয়ে গেলো। অনন্যা সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো। ভেবেছিলো সকলের সম্মুখে অনলের সাথে কথা বললে হয়তো অনল বাধ্য হয়ে তার সাথে কথা বলবে। কিন্তু তেমন কিছুই হলো না। বরং উপস্থিত সবাই এর মাঝে গুঞ্জন শুরু হলো। অনল এবং অনন্যার কথাটা প্রায় সকলের ই জানা। অনলের এমন ব্যাবহারে তারা নিশ্চুত হলো তাদের মাঝে কিছু একটা তো ঘটনা আছেই। প্লাবণ এবং রবিন মুখ চাওয়া চাওয়ি করলো। অনলের রাগ সম্পর্কে তারা বেশ ভালোভাবেই অবগত।
হোটেল থেকে বের হবার পর থেকেই চুপ করে রয়েছে অনল। তার মুখে কোনো কথা নেই। কঠিন মুখে বাইক চালাচ্ছে। চোখ পিচঢালা রাস্তার দিকে। ধারার মনে হাজারো প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে। প্রশ্নগুলো অনন্যাকে ঘিরে। অনল এবং অনন্যার মাঝে কি এমন মহাকান্ড ঘটেছিলো যে প্রিন্স উইলিয়াম কেট মিডেল্টনের মুখ দর্শনেও বিরক্ত। তাদের বন্ধুত্বে ফাটল বাধলো কেনো! সেও কি দিগন্তের মতো কান্ড করেছে! কথাটা ভাবতেই স্নায়ুকোষে দিগন্ত নামটি উদয় হলো। ধারাদের বন্ধুমহলেও ফাটল ধরেছে। দিগন্তকে সকল জায়গা থেকে ব্লক করে রেখেছে। কোনোভাবেই যোগাযোগ করার সুযোগ রাখে নি। মাহির সাথে দু-তিনবার কথা হয়েছে। সে ইনিয়ে বিনিয়ে এক-দুবার দিগন্তের হয়ে আর্জি গিয়েছিলো। কারণ পাঁচজনের মধ্যে দুজনের ঝামেলা হলে বাকি তিনজন হয়ে যায় অনাথ। তারা এই পক্ষেও যেতে পারে না আবার ওই পক্ষেও যেতে পারে না। ফলে তারা চায় যেনো এই গ্যা’ঞ্জা’মে’র একটা সমাধান হোক। অভীক, নীরব এবং মাহিও চায় এই মনোমালিন্য দূর হোক। পাঁচজনের বন্ধুমহল টা অক্ষত থাকুক। অভীক এবং নীরব সুপারিশ করতে আসলে ধারা তাদের আস্তো রাখবে না। ফলে তারাই মাহিকে ওকালতি করার পরামর্শ দিয়েছে। দিগন্ত ও বেশ অনুতপ্ত তবে ধারার সাথে কথা বলার উপায় খুঁজে পাচ্ছে না। কিন্তু ধারা মাহিকেও ফিরিয়ে দিয়েছে। সরাসরি মানা করে দিয়েছে সে। যে মানুষ বন্ধুত্বের মর্ম বুঝে না, তাকে বন্ধু বলে মানে না ধারা। হঠাৎ স্পিড ব্রেকারের কারণে বাইক নড়ে উঠলো। সাথে সাথেই চিন্তার ঘোর ভাঙ্গলো ধারার। টাল সামলাতে না পেরে আকড়ে ধরলো অনলের শার্ট। তখন ই অনলের গম্ভীর পুরুষালী স্বর কানে আসলো,
“ধরে বয়, একটা মোড় নিলেই তো কুমড়োর মতো গড়িয়ে পড়বি”
“খেয়াল করি নি”
“তা করবি কেনো? ভাবনায় তো ম্যাডাম তখন জাহাজ বানাচ্ছিলেন।”
ধারা উত্তর দিলো না। শুধু শক্ত করে অনলকে ধরে বসলো। মাথা ঠেকালো অনলের কাধে। তার উষ্ণ নিঃশ্বাস অনলের শার্ট ভেদ করে ছড়িয়ে পড়ছে। মৃদু বাতাস বইছে। আকাশে নিকষকালো মেঘের আনাগোনা। চাঁদটি নেই। ফলে আঁধার যেনো আরোও ঘন। রোড লাইটের সোডিয়াম আলোটুকুই পড়ছে ধারার মুখে। আলো আধারীর মায়ায় ধারাকে ফ্রন্ট মিররে দেখতে ভীষন মায়াবতী লাগছে। যেনো মায়ানগরীর কোনো সিন্ধুপুষ্প। অনল হাসলো। মসৃণ, স্মিত হাসি। বা হাত টা ব্রেক থেকে সরিয়ে কোমড়ে থাকা ধারার হাতটি ছুলো আলতো ভাবে। অমলিন কন্ঠে বললো,
“তুমি প্রণয়ে বাধিবে
নাকি প্রহেলিকায় রাখবে?
আমি প্রণয়ন তোমায় চাই
প্রহেলিকার দ্বার খোল
চলো হৃদয়ে হারাই” (জান্নাতুল মিতু)
ধারা আরোও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো অনলকে। তার মুখে স্নিগ্ধ হাসি। হাসিটি তৃপ্তির, হাসিটি সিন্ধুসমান সুখ প্রাপ্তির__________
********
পড়ন্ত বিকেল। কফি হাতে দাঁড়িয়ে আছে দীপ্ত। তার নজর রক্তিম সূর্যের দিকে৷ নীল আকাশ তার শেষ প্রান্তের চাকতির ন্যায় রক্তিম অস্তগামী সূর্য। পাখিরা উড়ে যাচ্ছে নিজ নিজ নীড়ে৷ দীপ্ত তখন গরম কফিতে চুমুক দিচ্ছে। ধুলোউড়ানো উষ্ণ, ব্যাস্ত দিনের অবসান। ব্যাস্ত শহরের কোলাহল এখন শেষ হবে। কিন্তু তার জীবনের কোলাহলগুলো থামার নাম নেই। রোকসানা আন্টি অতীষ্ট এই ঢাকার জ্বালাময়ী উত্তাপে। অস্ট্রেলিয়ার ওয়েদারে অভ্যস্ত নারী ঢাকার এই উত্তাপকে নাকোচ করছে। তারপর এতো ছোট বাসায় সে থাকতে পারছে না। তার পারি চার ভাগের এক ভাগ ও নয় এই বাসা। উপরন্তু পানির সমস্যা আলাদা৷ এসিও লাগান নি সেলিম সাহেব। তার মনে হচ্ছে অহেতুক খরচা। এখানে তো ঘর বাঁধতে আসা হয় নি৷ আর পুরোনো বাসা হওয়ায় এসি লাগাবার সিস্টেম নেই। মিস্ত্রী এনে লাইন করা, হাবিজাবি— কি দরকার! ফলে রোকসানার নাকি দমবন্ধ হয়ে আসে। উপরন্তু ইঁদুরের উৎপাত। কোথা থেকে তাদের তিনজনের কাপড়ের বক্সে ইঁদুর ছানার উপদ্রব হয়েছে কে জানে। প্রতিটি জামা কেটে ফালাফালা। ফলে আবারো জামা কিনে হয়েছে। কিন্তু ইঁদুর সমস্যার নিস্পত্তি হয় নি। প্রায় অন্ধকার রুমে তাদের আনাগোনার আভাষ পাওয়া যায়। দীপ্ত বহুবার ঔষধ ও এনেছে। কিন্তু তাতে লাভ হচ্ছে না। মরে যেনো আবার আসে তারা৷ যেনো কেউ প্রতিনিয়িত নিয়ম করে তাদের বাড়ি ইঁদুর সাপ্লাই করছে। ব্যাপারটা সন্দেহীন। কিন্তু দীপ্তের কিছু যায় আসছে না। সে নির্বিকার। সে বরং ইঞ্জয় করছে। যখন রোকসানা ইঁদুর দেখে ছুটে সোফার উপর উঠছে তখন দীপ্তের মনে হচ্ছে সে কোনো মিউট কমেডি স্কেচ দেখছে। ভাবতেই আয়েশ করে কফির মগে চুমুক দিলো দীপ্ত। ঠিক সেই সময়েই রোকসানার আগমন ঘটলো। তার মুখশ্রী রক্তিম এবং কঠিন। তেজী স্বরে বললো,
“আমি দেশে ফিরবো। আমার এখানে আর ভালো লাগছে না”
“তাহলে কবের টিকিট কাটবো?”
“আজকের ই”
“আচ্ছা”
নির্বিকার স্বরে বললো দীপ্ত। রোকসানা একরাশ বিরক্তি নিয়ে বললো,
“কেনো যেতে চাচ্ছি শুনবে না?”
“ইঁদুর, গরম বা দমবন্ধ লাগার জন্য?”
“না, তোমার আংকেলের উইল পড়েছি। জানো সে উইলে কি লিখেছে?”
“কি?”
“তার মৃত্যুর পর তার সকল সম্পত্তির চার ভাগের দু ভাগ পাবে ধারা, এক ভাগ আমি এবং এক ভাগ তুমি। এটার কোনো মানে হয়? যে মেয়ে তাকে উঠতে বসতে অপমান করছে তার জন্য সে সম্পত্তিও রাখছে। উপরন্তু আমাকে আর তোমাকে কষ্ট ও দিচ্ছে। এর বিহিত হওয়া চাই না?”
দীপ্ত চুপ করে রইলো কিছু সময়৷ তারপর চিন্তার ভাব করে বললো,
“ঠিক বলেছেন আন্টি। এর তো বিহিত হওয়াই চাই। উনি শুধু শুধু আমাকে উনার উইলে কেনো জড়িয়েছেন? আমার অংশটিও তো ধারার প্রাপ্য”
“কি বলছো তুমি দীপ্ত!”
“ভুল কি বললাম। আংকেলের লিজিট ডটার তো ধারা। আই এম নোওয়ান। আমাকে কেনো ইনভলভ করা হচ্ছে! আই হ্যাভ টু স্কিপ উইথ হিম”
রোকসানা ভ্রু কুঞ্চিত করে বিস্মিত নজরে চেয়ে রইলো দীপ্তের দিকে। দীপ্ত নির্লিপ্ত। ফলে বাধ্য হয়ে বললো,
“তাহলে তুমি তার সাথেই থাকছো?”
“কাজ না হওয়া অবধি আমি এখানেই থাকছি। আপনার টিকিট করে দিচ্ছি। শুধু শুধু কেনো এই ঝঞ্জাটে থাকবেন”
“লাগবে না”
বলেই রোকসানা নিজ ঘরে চলে গেলো। ঠাস করে দরজা আটকে দিলো সে। দীপ্ত নির্লিপ্ত হাসলো। রোকসানার এই স্বভাব তার জানা। সে যাবে না, কারণ তার ভয় আমে দুধে যদি মিলে যায়
অবশেষে নিজ ভার্সিটিতে পা রাখলো ধারা। এখন সে সেকেন্ড ইয়ারে। নতুন নতুন মুখ দেখা যাচ্ছে ভার্সিটির প্রাঙ্গনে। বেশ জড়ো সড়ো হয়ে কচি মুখগুলো ছুটছে নিজ নিজ ক্লাসে। স্বপ্ন পূরনের যুদ্ধে এবার নবযাত্রী এসেছে। কৃষ্ণচূড়া গাছটি এখন আগের মতোই দাঁড়িয়ে আছে। সে গাছের নিচেই দাঁড়িয়ে আছে ধারা। অপেক্ষা মাহির আগমনের৷ মাহি আসলেই একত্রে নতুন ক্লাসে পা রাখবে। তপ্ত রোদের নিচে কপালে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে ধারা৷ সূর্যমামার উত্তাপে ঘাম গড়িয়ে পড়ছে কপাল বেয়ে। সাদা ওড়নাড়ি দিয়ে কপাল মুছে নিলো সে। তখন ই আগমন ঘটলো মাহির। উত্তাপে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য যেই ক্রোধবানী উগরাবে তার আগেই খেয়াল করলো নীরব, অভিক এবং দিগন্ত তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। দিগন্তকে দেখতেই ধারা উলটো দিক হাটা দেবার প্রস্তুতি নিলো। শান্ত আগ্নেয়গিরির লাভা আবারোও তার প্রচন্ড রুপ নেবার আগেই সরে যাওয়া শ্রেয়। কিন্তু তার আগেই দিগন্ত অসহায় কন্ঠে বললো,
“আমাকে ক্ষমা করে দে ধারা। আমি সেদিন সত্যি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছিলাম”
চলবে,….
- মুশফিকা রহমান মৈথি


![প্রজাপতি আমরা দুজন [পর্ব-০৭]](https://amarlekha.com/wp-content/uploads/2025/07/photo_6212761625384044921_y.jpg)
![মেঘের দেশে প্রেমের বাড়ি [পর্ব-০৮]](https://amarlekha.com/wp-content/uploads/2025/10/3cf51236-2d29-45c2-a963-4d58a217fde2.jpg)
![নবোঢ়া: আগুনফুলের আত্মনিবেদন [পর্ব ৫৮]](https://amarlekha.com/wp-content/uploads/2025/05/IMG_20250529_231033.jpg)
![সেদিন ও তুমি [পর্ব-০২]](https://amarlekha.com/wp-content/uploads/2025/09/a-simple-light-colored-t-shirt-and-je.jpg)
![মেঘের দেশে প্রেমের বাড়ি [পর্ব-০৭]](https://amarlekha.com/wp-content/uploads/2025/07/srthgerf.jpeg)