তখন সদ্য বয়সন্ধিকালে পা দিয়েছি। জেএসসি পরীক্ষার তিন মাস আগেই প্রথম ফেসবুক একাউন্ট খুলি। ওই বয়সে ভার্চুয়াল জগৎ ছিল রূপকথার জগতের মতো! অসংখ্য মানুষের একাউন্ট, চাইলেই যে কারও সঙ্গে কথা বলা যায়—কী বিস্ময়কর অনুভূতি!
সবাইকে বন্ধু হিসেবে যোগ করতাম। তখন অপরিচিতদের সঙ্গে কথা বলা ছিল এডভেঞ্চারের মতো। কেউ মেসেজ পাঠালেই সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিতে ঝাঁপিয়ে পড়তাম।
কোনো ছেলের সঙ্গে মাত্র দুই মিনিট কথা হলেই তাদের কৌতূহল আরও বেড়ে যেত। ছবি চাইত, ফোন নম্বর চাইত। প্রথম দিকে এসব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতাম, কিন্তু বারবার একই অভিজ্ঞতায় বিরক্ত হয়ে শেষমেশ ব্লক করা ছাড়া উপায় থাকত না। ধীরে ধীরে ব্লক লিস্টটা দীর্ঘ হতে লাগল।
অক্টোবরে একদিন আমার এক বন্ধু তার এক্স-বয়ফ্রেন্ডের আইডি খুঁজে কিছু একটা বলার রিকুয়েষ্ট করল। ছেলেটির নাম তুহিন। কী বলতে বলেছিল, ঠিক মনে নেই, তবে বন্ধুর কথামতো খুঁজতে শুরু করলাম।
ফেসবুকে তুহিন লিখে সার্চ করে বোকা বনে যাই! অসংখ্য তুহিনের একাউন্ট, কোনটা যে বন্ধুর এক্স, সেটা বোঝাই কঠিন। অগত্যা আন্দাজে প্রথম দশজন তুহিনকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়েছিলাম।
বন্ধুর এক্স-বয়ফ্রেন্ডকে খুঁজে পাওয়া হয়নি, তবে সেই দশজনের মধ্যে এমন একজন ছিল, যার সঙ্গে আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের শুরু হয়েছিল। সেই তুহিনই যে পরবর্তীতে আমার জীবনসঙ্গী হবে, সেটা তখন কল্পনাতেও ছিল না! এক জেলার মেয়ের সঙ্গে অন্য জেলার এক ছেলের এইভাবে পরিচয়! এ তো ভাগ্যের খেলা! ভাবলেই অবাক লাগে, কেমন করে এক টুকরো আন্দাজ আমার জীবনটাকেই বদলে দিল!
নভেম্বরের দশ বা এগারো তারিখে নিউজফিড স্ক্রল করতে করতে চোখে পড়ল একটা ছবি। একটা ছেলে, ভীষণ ফর্সা, বাদামি চোখ, মাথায় হাত দিয়ে একটা পোজ দিয়েছে। ছবিটা দেখে হঠাৎ করেই বুকের ভেতর কেমন একটা অজানা অনুভূতি কাজ করল। লজ্জার কথা কী বলব, ওই বয়সে জীবনের প্রথম ক্রাশ খাওয়ার অনুভূতিটাই হয়েছিল তখন। এতটাই আকর্ষণীয় লাগল ছেলেটাকে যে কমেন্ট করতে নিজেকে আর আটকাতে পারলাম না।
আমি কমেন্ট করলাম,
– ভাইয়া, মাথায় হাত কেন? কী হয়েছে?
কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই রিপ্লাই এল,
– ভাইয়া, উকুন হয়েছে।
– উকুন ফেলেন না কেন?
– তুমি এসে ফেলে দাও।
– তাহলে সিলেট আসেন।
বেশ সিরিয়াস ভঙ্গিতে তুহিন লিখল,
– এড্রেস দাও, এখুনি চলে আসব।
উত্তেজনায় আমিও চ্যালেঞ্জ করে বসলাম,
– সিলেট, উপশহর, অমুক রোড, অমুক বাসা। যদি না আসেন, আপনি একটা রামছাগল।
– ভাইয়া, আমাকে রামছাগল বলতে পারলা?
ব্যস, শুরু হয়ে গেল আমাদের কথার লড়াই। কমেন্ট সেকশন একটা যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে উঠল। কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছি না। পাল্টাপাল্টি কথা বলতেই থাকলাম।
তিনদিন পর আবার একটা ছবি এলো নিউজফিডে। এইবার তুহিন পেটে হাত দিয়ে পোজ দিয়েছে। কমেন্ট করলাম,
– আজ পেটে কী হলো?
কমেন্টের রিপ্লাইয়ের অপেক্ষায় ছিলাম, কিন্তু রিপ্লাই এলো না। তার বদলে মেসেঞ্জারে নোটিফিকেশন এলো! ইনবক্স খুলে দেখি তার মেসেজ,
– বউ রান্না করেনি তো পেটে ক্ষুধা। তাই পেটে হাত রেখেছি।
তারপর শুরু হলো ইনবক্সে কথার স্রোত। প্রথমে আমাকে সন্দেহ করে বলেছিল,
– তুমি কার ফেক আইডি?
আমি রাগ দেখিয়ে জবাব দিয়েছিলাম,
– কার ফেক আইডি মানে? প্রমাণ লাগবে? এড্রেস দিচ্ছি, এসে দেখে যান আমি কে!
ও তখন জানাল,
– আসলে, এর আগে দুটো মেয়ে আমাকে ফেক আইডি দিয়ে জ্বালিয়েছে। অমুক, তমুক তাদের নাম। তুমি কে সত্যি বলো।
আমি তো একেবারে চ্যালেঞ্জের মুডে চলে গেলাম। নিজের পুরো এড্রেস লিখে পাঠিয়ে দিলাম। বললাম,
– আসেন, এসে দেখে যান। যদি মিথ্যে হই, রামছাগল তকমাটা আমিই নিয়ে নেব!
এ কথা শুনে ও চুপ হয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকেই কথাবার্তা জমে উঠল।
ওর ভাষ্যমতে, আমার কথাবার্তায় একটা শিশুসুলভ সরলতা ছিল, যে কারণে ফেক আইডি হওয়ার সম্ভাবনা তার মাথা থেকে সরে গেল। এরপর থেকে দিনরাত চলত আমাদের কথা।
একদিন তুহিন আমাকে একটা সিক্রেট কথা জানাল। ওর একজন ক্রাশ আছে। মেয়েটার নাম বলল, এমনকি তার ছবিও পাঠাল। কিন্তু ও কখনো মেয়েটার সঙ্গে কথা বলেনি, দেখাও করেনি। দূর থেকে চুপচাপ পছন্দ করত। আমি বলতাম,
– ভাইয়া, আপনি আপুটাকে প্রপোজ করে ফেলুন। নয়তো আমি হেল্প করি? মেসেজ দিয়ে বলি?
সে তাড়াতাড়ি না করে দিত। বলত,
– না না, তোমার এসব করতে হবে না।
কিন্তু আমি ঠিকই চুপিচুপি সেই মেয়েটার আইডি স্টক করতাম। প্রোফাইল ঘেঁটে দেখতাম সে কী পোস্ট করে, কার সঙ্গে কথা বলে। এইসব করার সময় নিজের ভেতর হিংসা টের পেতাম। মুখে যতই বলি, আপুটাকে মনের কথা খুলে বলুন।
মনে মনে চাইতাম না তুহিন সেটা করুক। উল্টো মনে মনে ভাবতাম, বড় হয়ে ওর বাবা-মাকে পটিয়ে একদিন ঠিক ওকেই বিয়ে করব আমি।
এটা ভেবেই নিজের মনে হাসতাম। বয়সটাই তখন এমন ছিল, যখন ছেলেমেয়েরা বিপরীত লিঙ্গের প্রতি প্রথম আকর্ষণ অনুভব করে। আমিও ব্যতিক্রম ছিলাম না। তুহিনের প্রতি একটা অদ্ভুত টান কাজ করত। ওই টানটাকে ওই বয়সে ভালোবাসাই মনে হতো, কিন্তু এখন দ্বিধায় ভাবি, ওই বয়সে আদৌ কাউকে ভালোবাসা যায়?
এভাবেই সিনিয়র-জুনিয়রের বন্ধুত্বের এক মাস কেটে গেল। তুহিন আর আমি একে অপরের দিন শুরু ও শেষের অংশ হয়ে গিয়েছিলাম। আমাদের বয়সের পার্থক্য প্রায় চার বছর হলেও সেটা বন্ধুত্বের বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি।
একদিন হঠাৎ করেই আমার ফোন নষ্ট হয়ে গেল। ফেসবুকে যাওয়া তো দূরের কথা, কারও সঙ্গে যোগাযোগ করার উপায়ও ছিল না। তিনদিনের জন্য আমি ভার্চুয়াল দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম। আমার টমবয় স্বভাব তখন কোথায় যেন হারিয়ে গেল। সারাদিন ছেলেদের সঙ্গে মার্বেল খেলে বেড়ানো মেয়েটা তিনদিন ঘর ছেড়ে বেরোল না।
তুহিনকে মিস করতে করতে চোখ দিয়ে জল পড়ত। রাগ করতাম নিজের ওপর। কেন এতটা মনের ভেতর ঢুকে পড়েছে ও? কাঁদতে কাঁদতে টিস্যু দিয়ে চোখ মুছতাম আর ভাবতাম,
“তুহিন কি আমায় মিস করছে?”
তিনদিন পর ফোন ঠিক হলো। ফেসবুকে ঢুকে দেখি তুহিন আমার ইনবক্স ভরিয়ে রেখেছে মেসেজ দিয়ে। প্রথম মেসেজেই লেখা,
– কই হারিয়ে গেলে?
মেসেজের টাইম দেখে বুঝলাম, ও প্রায় বত্রিশ ঘণ্টা আগে শেষবার অনলাইনে ছিল। আমি তাড়াতাড়ি রিপ্লাই করলাম। কিছুক্ষণ পর দেখি, তুহিন এক্টিভ! আমার মেসেজ পাঠানোর মাত্র পনেরো মিনিটের মাথায় সে অনলাইনে এল। কী কাকতালীয় ব্যাপার!
মেসেজ করেই বলল,
– এতদিন কোথায় ছিলে?
এরপর আর কথা ঘোরাল না। সরাসরি নিজের নম্বর দিয়ে বলল,
– এটা রাখো। তুমি কখনো হারিয়ে গেলে যেন খুঁজে পাই।
তবুও আমার নম্বর চাইল না, এমনকি এতদিনেও ছবি দেখার কথাও বলল না। অথচ তখন ফেসবুকে অচেনা কারও সঙ্গে দুই মিনিট কথা হলেই ছবি চাওয়াটা ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু সে এসব কিছুই করল না।
তুহিনের এই আচরণে ওর প্রতি আমার ভেতরে কোথাও একটা আলাদা সম্মান জন্ম নিল।
তেরো নভেম্বর। দুপুর গড়িয়ে বিকেল। তুহিন হঠাৎ মেসেজ দিল,
– তোমাকে একটা কথা বলব।
কথার ধরন দেখে কেমন জানি একটা শঙ্কা মনে চেপে বসল। কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে রিপ্লাই দিলাম,
– বলুন।
পরের মেসেজটা আমাকে পুরোই অস্থির করে তুলল,
– কথাটা শোনার পর হয়তো আমাদের সম্পর্ক আগের মতো থাকবে না। আমরা আলাদা হয়ে যাব। কখনো দেখাও হবে না।
এই কথায় বুকটা ধক করে উঠল। মনে হলো, তুহিনের হয়তো সেই ক্রাশের সঙ্গে প্রেম হয়ে গেছে। আর সেই মেয়েটাই হয়তো শর্ত দিয়েছে, আমার সঙ্গে যেন আর কোনো যোগাযোগ না রাখে। এমন একটা ভয়ংকর চিন্তা মাথায় আসতেই মনে যন্ত্রণা শুরু হলো। কীভাবে ওর কথা শুনব? যদি সম্পর্কটা সত্যিই শেষ হয়ে যায়!
আতঙ্কে দম বন্ধ হয়ে আসছিল। তবুও মেসেজ দিলাম,
– বলুন।
তুহিন কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর একটা মেসেজ পাঠাল। এমন কিছু লিখেছিল:
“ashshsjkskskwj#Ihsjsmskwkwhwvvsbskjwnnwnensjskskkwkwmwkkwjsns#Lvvwbwkwkwiwjwhwgwhsbns#Ohbsjsjsksjajjajajsnnsnananggg#Vavabjakwkauhwhw#Efsgbskwkwjwhhshshshgghajwkwkwkkwkwkwjwbbwbwnwnwnwn#Ubbjkllkhgffgghjkkkkkk.”
প্রতিটি হ্যাশট্যাগের পর একেকটা ওয়ার্ড। আমরা আগে কখনো এভাবে সংকেতে কথা বলিনি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, প্রথম দেখাতেই পুরোটা আমার মাথায় পরিষ্কার হয়ে গেল। হ্যাশট্যাগগুলোর ভেতর থেকে অদ্ভুতভাবে ভেসে উঠল দুটো শব্দ—”Love U.”
আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। মনের মধ্যে কেমন ঝড় বয়ে যেতে লাগল। যার কথা ভেবে রাত জাগতাম, যার জন্য মনে মনে লজ্জা পেতাম, সে-ই আমাকে ভালোবাসে! আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।
কিছুক্ষণ বসে থাকার পর আনন্দে আর স্থির থাকতে পারলাম না। বিছানার ওপরে উঠে শুরু করলাম লাফালাফি। খুশি আর উত্তেজনায় বিছানার কাঠের একটা পাশ ভেঙে গেল। খট করে একটা শব্দ হলো।
তুহিন আমাকে ভালোবাসে। এই সত্যটাই তখন দুনিয়ার সবকিছুর উর্ধ্বে ছিল।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে, প্রচণ্ড উত্তেজনা আর লজ্জা সামলে রিপ্লাই দিলাম,
– ভেবে দেখব।
মেয়ে মানুষ বলে কথা, ভাব থাকাটা তো জরুরি! মনে মনে হাসছিলাম, আর ভেতরে ভেতরে উচ্ছ্বাসে ভাসছিলাম। অন্যদিকে তুহিন নাকি আমাকে প্রপোজ করেই এমন ভয়ে ছিল যে, সোজা নিজের বাবার ঘরে গিয়ে ঢুকেছিল। কারণ, জীবনে এই প্রথম কোনো মেয়েকে প্রপোজ করেছে। ভয় পাচ্ছিল, যদি আমি রাগ করে তাকে ব্লক করে দিই।
যখন দেখল, আমি ব্লক তো দূরের কথা, স্বাভাবিকভাবেই চ্যাট করছি, তখন বুঝে গেল, আমার উত্তর পজিটিভই হবে।
পরের দুই দিন, ১৪ ও ১৫ ডিসেম্বর, অন্যরকম সময় কাটল। দিনরাত আমরা চ্যাট করলাম। প্রতিটা কথায়, প্রতিটা বাক্যে ভেতরে ভেতরে একধরনের শিহরণ হচ্ছিল। আমি সারাক্ষণ ব্লাশিং করছিলাম।
১৫ ডিসেম্বর তুহিনের কলেজে বিজয় দিবস উপলক্ষে ফুল দিয়ে সাজানো হচ্ছিল। সেই ব্যস্ততার মাঝেও সে ফুল দিয়ে “Love You Elma” লিখে একটা ছবি তুলে পাঠাল। ছবিটা দেখেই গালটা এত লাল হয়ে গেল যে, মনে হলো কেউ টুকটুকে রঙ মাখিয়ে দিয়েছে।
সেদিন রাত বারোটার পর, মানে ১৬ ডিসেম্বর, আমি আর নিজেকে আটকাতে পারলাম না। রিপ্লাই দিলাম,
– আমিও তোমাকে ভালোবাসি।
তুহিনের মেসেজ আসতে সময় লাগেনি। আমরা গভীর রাত অবধি চ্যাট করলাম। সেই প্রথম আমি “আপনি” থেকে “তুমি”-তে এসে গেলাম। একটুও অস্বস্তি লাগেনি। মনে হচ্ছিল, এটাই স্বাভাবিক।
সেদিনের কথা ভাবলে এখনো মনে হয়, সেই রাতটা ছিল স্বপ্নের মতো। কত স্বপ্ন, কত আবেগ জমেছিল মনে। আমাদের বয়সটাই তখন এমন ছিল, সবকিছু অতিরিক্ত রঙিন, অতিরিক্ত আবেগী। মনে হচ্ছিল, জীবনটা ঠিকঠাক গতিপথে হাঁটছে।
পরদিন সকালে তুহিন বলল,
– আগামীকাল সারাদিন কলেজে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান থাকবে। বিকেলেই তোমার কাছে চলে আসব।
প্রথম প্রেমের উত্তেজনায় মনটা পাগল হয়ে যাচ্ছিল। সারাদিন অপেক্ষা করলাম, কখন আসবে আমার স্বপ্নের নায়ক! যে আমায় ভালোবাসে, যাকে আমিও ভালোবাসি। কিন্তু বিকেল গড়িয়ে গেল, সন্ধ্যা নামল, তবু তার দেখা নেই। প্রথমে ভাবলাম, হয়তো কাজের চাপেই দেরি হচ্ছে। কিন্তু একটু পর অস্থিরতা শুরু হলো।
সেই সময় ফেসবুক প্রেম অনেকের কাছেই বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। চারপাশে শুধু স্ক্যাম আর প্রতারণার গল্প শোনা যেত। তখন মনে হলো, আমাকে কী ঠকাল? আমার সাথে কি ছলনা করল? চিন্তায় মনটা বিষণ্ণ হয়ে উঠল। ধুকপুকানি এত বেড়ে গেল যে, মনে হচ্ছিল হৃদয়টা ছিঁড়ে বেরিয়ে আসবে।
রাতে ফোন হাতে নিয়ে ফেসবুকে লগ ইন করলাম। নিউজফিডে তুহিনের কাজিনের পোস্ট এলো। ক্যাপশনে লেখা,
“তুহিন বাইক এক্সিডেন্ট করেছে। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।”
পোস্টটা পড়ার পর আমার কাছে পৃথিবীটাই থমকে গিয়েছিল। তুহিন প্রথম থেকেই বাইকার ছিল, কখনোই এক্সিডেন্ট করেনি৷ প্রেমের প্রথম দিনেই করল! নিজেকে বড় অশুভ মনে হচ্ছিল। এক ফ্রেন্ডকে জড়িয়ে খুব কাঁদলাম!
তুহিনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। তিনটা দিন কেটেছিল দুশ্চিন্তায়, ভয়ে, আর অনিশ্চয়তায়।
তিন দিন পর তুহিন মেসেজ করল হাসপাতাল থেকে।
“এইযে গেলাম তোমাকে ছেড়ে, আর কখনো যাব না।”
সেই প্রতিজ্ঞা আজ আট বছর পেরিয়েও অটল, অক্ষয়৷
আমরা এখন বিবাহিত। ভার্চুয়ালে যতদিন প্রেম করেছি, তুহিন প্রায়ই বলত,
– কবে যে তুমি আমার বউ হবে আর রাগ করে ক্যাচক্যাচ করবে!
তখন মনে হতো, রাগ করা হয়তো তার কাছে মজার কিছু। কিন্তু এখন, রাগ করে যখন কথা বলতে শুরু করি, তখন বলে,
– একটা মানুষ এত কথা কীভাবে বলে? কখন থেকে হাঁসের মতো প্যাকপ্যাক করে যাচ্ছো!
আর যখন চুপ হয়ে যাই, ও বলে,
– প্লিজ কথা বলো। যা ইচ্ছে বলো, বকাঝকা করো, কিন্তু চুপ থেকো না।
এই হলো আমাদের জীবনের মজার পরিবর্তন।
ভালোবাসার অনেকগুলো স্তর আছে। প্রতিটা স্তর একেকরকম সুন্দর। ভার্চুয়াল থেকে বাস্তবতায় এসে দেখেছি, ভালোবাসা শুধু অনুভূতির বিষয় নয়, এটা একে অপরকে বোঝার, মানিয়ে নেওয়ার, আর প্রতিদিন নতুন গল্প লিখে যাওয়ার নাম।
জীবন হয়তো চিরকাল একরকম থাকবে না, কিন্তু যতদিন সে আমাকে ভালোবাসায় ভাসাবে, যতদিন এই সম্পর্কে সুখ আর আনন্দে ডুবে থাকব, ততদিন এই ১৬ ডিসেম্বর আমি উদযাপন করব।
হ্যাপি লাভ অ্যানিভার্সারি, সুইটহার্ট
- ইলমা বেহরোজ


![বিরহ বীণার সুর [পর্ব-০৩]](https://amarlekha.com/wp-content/uploads/2025/07/photo_6307304915109790701_y.jpg)

![সোহাগি সাঁঝমল্লার [পর্ব-০১]](https://amarlekha.com/wp-content/uploads/2025/11/31a7a4da-aab9-4232-b478-dce9bb26ec9c.jpg)
![প্রজাপতি আমরা দুজন [পর্ব-০৮]](https://amarlekha.com/wp-content/uploads/2025/07/photo_6212761625384044921_y.jpg)
![মেঘের দেশে প্রেমের বাড়ি [পর্ব-০৯]](https://amarlekha.com/wp-content/uploads/2025/10/3cf51236-2d29-45c2-a963-4d58a217fde2.jpg)
![সেদিন ও তুমি [পর্ব-০৩]](https://amarlekha.com/wp-content/uploads/2025/09/photo_6107219645971499828_y.jpg)