“ মাফিয়া নই আমি, তবে মাফিয়ার থেকেও ভয়ানক কেউ।’’
ভারী গলায় কথাটা পাশের বারান্দা থেকেই বললো বাহারাজ। স্মরণ শুনলো। ভয় পেলেও মুখে প্রকাশ করলো না। অবশ্য প্রকাশ করলেও সামনের জন যে খুব একটা টের পাবে এমনও নয়। স্মরণ সটান হয়ে দাঁড়ালো। পাশের বারান্দাটায় ঘুরে তাকাতেই কালো অবয়ব দেখে বুঝলো বাহারাজ দাঁড়িয়ে আছে। স্মরণ শুধু একটা কথাই ভাবতে লাগলো, এই ছেলে জানলো কিভাবে সেই কথাটা সম্পর্কে? স্মরণ প্রশ্ন করেই বসলো,“ আপনি কি আমাদের কথায় আড়ি পেতেছিলেন?’’
“ এমন স্বভাব বাহারাজ দেওয়ানের নেই। তবে কেউ যদি মাইক লাগিয়ে পুরো এলাকা শোনানোর জন্য বুলি আওড়ায় তবে শুনলে দোষ হবে না নিশ্চয়।’’
স্মরণ থতমত খেলো। এই অন্ধকারেও বুঝতে পারলো লোকটা তারই দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েদের এই ইন্দ্রিয়শক্তি প্রখর। স্মরণ ভাবছে লোকটার কান এতো সজাগ কিভাবে? ছাদে থেকে স্মরণ কথাটা বলেছে কিন্তু এই ছেলে তিনতলা থেকে শুনলো কিভাবে? এর কানগুলো নিশ্চয় বাদুড়ের কানের মতো হবে। স্মরণ সামনের দিকে তাকিয়ে ঠেস দিয়ে বলে উঠলো,“ আসলে আমি স্বাভাবিকই বলেছি। তবে আপনার কান স্বাভাবিক নয়।’’
“ কি বলতে চাইছো তুমি?’’
তখনই ভেতর থেকে শীতল ডেকে উঠলো,“এই স্মরণ!’’
স্মরণ এই সুযোগই খুঁজছিলো। কিছু না বলে দ্রুত ভেতরে ঢুকে গেলো। বাহারাজ চেয়ে দেখলো শুধু। কপাল তার কুঁচকানো। এই মেয়ের ভয় ডর কিছুই নেই মনে হচ্ছে তার।
খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠলো বীথি। সূর্য তখনও পূর্বাদ্বারে ওঠে নি। আজ রাতেই তার বিয়ে অন্তর নামক লোকটার সাথে। তবে বীথি এই বিয়ে করতে চায় না। এমনকি তার বড় ভাই বাহারাজও এই বিয়ে হতে দিতে চায় না। বীথি কাউকে ভালোবাসে। হ্যা বীথি বড় ভাইয়ের বন্ধু অভ্রকে ভালোবাসে। অভ্রও বীথিকে ভালোবাসে। তবে বাসনা আমান মোটেও রাজি নন। মেয়েকে একপ্রকার ঘরবন্দি করে রেখেছেন। না যেতে দিচ্ছেন ভার্সিটিতে আর না অন্য কোথাও। মোটকথা বীথির বাইরে যাওয়ায় বন্ধ।
বীথি বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। দরজাটা বাইরে থেকে বন্ধ। বীথি ওয়াশরুমে গেলো ফ্রেশ হতে। এই ঠান্ডার মাঝে বের হলো শাওয়ার নিয়ে। কাঁপতে কাঁপতে চুল মুছে নিলো। খাটের নিচ থেকে লাগেজটা বের করলো। এটা পালিয়ে যাওয়ার সুবিধার্থে আগে থেকেই গুছিয়ে রেখেছে। অন্তরকে কোনোমতেই বিয়ে করবে না বীথি।
তার রুমের দরজাটা হঠাৎ খুলে গেলো। ধীরপায়ে ভেতরে ঢুকলেন বড় চাচী উপমা বেগম। বীথি উঠে দাঁড়ালো। উপমা বেগম দরজা লাগিয়ে সোজা বীথির কাছে গেলেন। চিন্তান্বিত স্বরে শুধালেন,“ সবকিছু গোছানো আছে? থাকলে তুই এখনই বেরিয়ে পড়। বাইরে বাহারাজ তোর জন্য অপেক্ষা করছে।’’
বীথি মস্তক দুলিয়ে বললো,“ হ্যা সবকিছু গোছানো আছে।’’
“ তাহলে বেরিয়ে পড় মা। এই নরক থেকে বেরিয়ে যা। আয়।’’
বীথি লাগেজটা হাতে নিলো। উপমা বেগম পা টিপে টিপে বের হলেন। বের হলো বীথিও। আজ বাড়িতে লোকজনের অভাব নেই। সবাই বেঘোরে ঘুমিয়ে। তবে যেকোনো মুহুর্তে লোকজন জেগে উঠতে পারে। এমন হলে বিরাট বড় সমস্যার মুখোমুখি হবে দুজনে। উপমা বেগম বীথিকে নিয়ে বহুকষ্টে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। পুরো বাড়ি জুড়েই সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো। তবে এই বাড়ির সিসিটিভি ক্যামেরা শায়ন আগে থেকেই হ্যাকড করে রেখেছে। যার দরুণ এই নিয়ে সমস্যা তেমন হবে না। তবে বাঁধ সাধলো দারোয়ান। এখনও ভালোভাবে ভোরের আলো না ফুটায় তাদের ঠিকভাবে দেখতে পেলো না। উপমা বেগম বীথিকে নিয়ে বাড়ির পেছনের দিকের রাস্তা অবলম্বন করলেন। এইদিকটা সবসময়ই খুব নিরব থাকে। বাড়ির পেছনের দিক দিয়ে বীথি খুব ভালোভাবেই বের হয়ে গেলো। বাইরে গিয়ে উপমা বেগম বীথিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিয়ে বললেন,“ দুই ভাই-বোনই, এই বাড়িতে ছোট থেকে যে খুব ভালো ছিলে মোটেও নয়। এবার মুক্ত বিহঙ্গের মতো উঁড়ে বেড়া বীথি। বাহারাজ তোকে রক্ষা করবে। যা, সাবধান যা। রাস্তার মোড়ে গেলেই অভ্রকে পেয়ে যাবি।’’
বীথি উপমা বেগমকে নিজেও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কৃতজ্ঞতার সহিত বলে উঠলো,“ তুমি আমায় বাড়িতে থাকতেও অনেক সাহায্য করেছো। আর আজ তো আমার জীবনই বাঁচিয়ে দিলে। তোমাকে ধন্যবাদ জানালে খুব কম হয়ে যাবে। এই ঋণ পরিশোধ করার মতো নয়।’’
উপমা বেগম বীথির গালে হাত দিয়ে বললেন,“ যা। সাবধানে যাবি। আমার দোয়া তোদের জন্য সবসময়ই থাকবে। দ্বিতীয় জীবনের সূচনা সুন্দর এবং মঙ্গলময় হোক।’’
বীথি চলে যেতে লাগলো। উপমা বেগমও দ্রুত বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলেন। বীথি রাস্তার মোড়ে আসতেই দেখলো সত্যি সত্যিই অভ্র গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অভ্রকে দেখতেই বীথির ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটলো। খুব খুশি হলো বীথি। অভ্রও বীথির দিকে এগিয়ে এসে মেয়েটাকে বুকে আগলে নিলো। অন্তর অনেকদিন পর দেখছে বীথিকে।
গতকাল রাতে দেরি করে ঘুমানোতে আজ সকালে ঘুম থেকে উঠতে বেশ দেরি হলো স্মরণের। মাথায় হাত দিয়ে উঠে বসলো সে। চোখে তখনও ঘুমের রেশ কেটে যায় নি। ঢুলুঢুলু চোখে পাশে তাকালো। আর বললো,“ এই শীতল কত বাজে? তুমিও এখনও ওঠো নি?’’
কত বাজে জিজ্ঞাসা করে নিজেই আবার ফোনে টাইম দেখে নিলো। সাতটা বেজে দশ মিনিট দেখতেই চোখ কপালে উঠে যাওয়ার জোগাড়। তার ঘুম ঘুম ভাব মুহুর্তেই পালালো। আবারও পাশে তাকিয়ে বলে উঠলো,“ এই শীতল কখন উঠবে?’’
বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াতেই তখনই কেউ তার রুমের ভেতরে এলো। তার পেছনে এসে বললো,“ আজ এতো দেরি করে ঘুম থেকে উঠলে স্মরণ?’’
চমকে উঠলো স্মরণ। চমকে গিয়ে খাটের ওপর বসে পড়লো সে। এই খাটটা নোমান সাহেব ব্যবস্থা করে দিয়েছেন এইতো কিছুদিন আগে। তবে যে নড়বড়ে একবার বসলেই মনে হবে এখনই ভেঙে যাবে। এদিকে সামনে শীতল পাশে আরেকজন ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে পিলে চমকে উঠলো। অজানা ভয়ে শ্বাসকষ্ট হওয়ার মতো অবস্থা তার। কোনোমতে বুলি আওড়ালো,“ তু..তুমি কে?’’
শীতল একবার বিছানার দিকে তাকালো। তারপর স্মরণের দিকে তাকিয়ে বলল,“ সরি স্মরণ। আমার কোনো উপায় ছিলো না। ওই মেয়েটা বীথি। কিছুদিন তোমার সাথে থাকবে।’’
স্মরণ এবার পাশে কম্বল জড়িয়ে ঘুমিয়ে থাকা বীথি নাম উটকো ঝামেলার দিকে তাকালো। খুব ভালোভাবে খেয়াল করলো স্মরণ এই মেয়েটাকে সে চেনে না। অথচ একটু আগেই একে শীতল ভাবা স্মরণ এখন ভাবছে এই মেয়েটা কে? চেহারাটা যেন কার সাথে খুব মিল পাচ্ছে স্মরণ। শীতল আবারও বলে উঠলো,“ ও খুব বড় বিপদে পড়েছে স্মরণ। আমি তোমাকে সমস্ত ঘটনা খুলে বলবো বিকেলে। তুমি ওকে থাকতে দাও কয়েকদিন।’’
স্মরণ চোখ ছোট ছোট করে বীথি নামক মেয়েটাকে দেখলো পলক ফেলে। মেয়েটা থাকবে ভেবে তার মাথায় প্রথমেই এলো ভাড়ার চিন্তা, থাকা–খাওয়ার চিন্তা! অবশ্যই মেয়েটার ব্যাপারে। একা সংসারে এসব ভাবা নিতান্তই স্বাভাবিক। এমনিতেও স্মরণের নিজেরই বেশ অভাব। তবুও দিন চলে যায় কোনোমতে। এদিকে নতুন এক সদস্যের ফলে তার জীবনে কেমন প্রভাব বিস্তার করবে এই নিয়ে ভাবলো। ভাবলো এই নিয়েও যে মেয়েটা এলো কখন? আর কে আনলো? মেয়েটার পরিচয় কি? স্মরণের এবার শীতলের ওপরও সন্দেহ জাগলো। হুট করেই মনে শঙ্কা জাগলো খারাপ কিছুর। ভেবে নিলো এই বাসায় তার থাকা হবে না বেশিদিন।
চলবে,…
- Junani CH


![প্রজাপতি আমরা দুজন [পর্ব-০৭]](https://amarlekha.com/wp-content/uploads/2025/07/photo_6212761625384044921_y.jpg)
![মেঘের দেশে প্রেমের বাড়ি [পর্ব-০৮]](https://amarlekha.com/wp-content/uploads/2025/10/3cf51236-2d29-45c2-a963-4d58a217fde2.jpg)
![নবোঢ়া: আগুনফুলের আত্মনিবেদন [পর্ব ৫৮]](https://amarlekha.com/wp-content/uploads/2025/05/IMG_20250529_231033.jpg)
![সেদিন ও তুমি [পর্ব-০২]](https://amarlekha.com/wp-content/uploads/2025/09/a-simple-light-colored-t-shirt-and-je.jpg)
![মেঘের দেশে প্রেমের বাড়ি [পর্ব-০৭]](https://amarlekha.com/wp-content/uploads/2025/07/srthgerf.jpeg)